বুধবার, ৩১ মে, ২০১৭

ছায়াসঙ্গী
জোনাকী আক্তার
তুমি তো আর তুমি নেই
মিশে আছো আঁধারে
ভীত সন্ত্রষ্ট আমি
তুমি আছো বলেই সেই আঁধারেই থাকি ।
তোমাকেই পথের পাথেয় ভেবে
সেই আঁধারে আলো খুঁজি ।
অবোধ আমি কত যে ভুল করি
ভুল করে ভুল পথে চলি ,
তুমি তো আমার ছায়া সঙ্গী হয়ে,
ক্ষীণ জ্যোতি হয়ে এগিয়ে চলার পথ দাও দেখিয়ে ।
তুমি তো আর তুমি নেই
মিশে আছো বিষন্নতায়,
একলা যখন কাটে বেলা
স্মৃতি হয়ে দাও দেখা ।
তোমার রেখে যাওয়া স্মৃতি কষ্ট দিলেও,
সময়ের চাকার গতি যখন থেমে যায় আমার কাছে,
তুমিই তখন অদৃশ্যভাবে থাকো পাশে ।
যত দূরেই থাক না কেন
আছো তুমি আমার ছায়া সঙ্গী হয়ে ।

শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭

রূপন্তি
জোনাকী আক্তার
এইতো প্রায় সেদিনের কথা
ঘোর অমাবস্যা ভেদ করে ,
পূর্ণিমার চাঁদ দেখা দিয়েছিলো ।
সেই সাথে বাবা-মার ঘর আলোকিত করে
ফুলের মত ফুটফুটে এক কন্যার আবির্ভাব হয় ।
যেই দেখে সেই বলে
বেশ হয়েছে , বেঁচে থাকুক
অনন্তকাল ।
চক্ষুযুগল হরিণের ন্যায় মায়াবিনী
গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট ।
বাবাও আদর করে নাম রাখে রূপন্তি ,
রূপু বলেই ডাকতো সবাই
মুগ্ধ হতো আদু আদু কথা বলায় ,
ছোট ছোট পায়ে গুটি গুটি পদচারণ
যেন সবার হৃদয় কেড়ে নিতো ।
ইচ্ছা ছিলো বাবার মেয়ে বানাবে ব্যারিস্টার
দেখতে দেখতে রূপু বাবা-মার কোল ছাড়লো
স্কুলের গন্ডি পেরুলো ,
সেবার জেলার মাঝে রূপুই হলো সেরা,
খুশি বাবা-মার চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো,
পাড়া-পড়শি সবাই বলে
মেয়ে তো নয় যেনো রূপুর কাঠি,
বাবা-মাকে বলতো তখন
মেয়ে যে তাদের মানুষ হবে,
যশ ছড়াবে সবার ।
বাবার ইচ্ছা করতে পূরণ
গেলো উচ্চ শিক্ষা নিতে,
কে জানতো হায় !
এখানেই তার কপাল পুড়বে ,
বাবার দেখা স্বপ্ন ভাঙ্গবে ?
সেখানেরই এক প্ৰভাবশালী নরপশুর ,
সরলমনা রূপু পড়লো কুনজরে।
প্রণয়ের ফাঁদে দিয়েছিলো পা,
দেখেছিলো আরও একটি স্বপ্ন ।
সেই স্বপ্নই যে তার জীবনে হবে অভিশাপ,
কে জানতো তা ?
বিশ্বাস করে রূপু গিয়েছিলো নরাধমের সাথে,
জানতোনা রূপু তার বিশ্বাস ছিলো মূল্যহীন
সেই নরপশুর কাছে ।
রাগে,দু:খে ,ক্ষোভে আর হতাশায় সেদিনই রাতের অন্ধকারে
রূপু পথ বেছে নেয় আত্মহননের ।
পাড়া-পড়শিদের মাঝে যারাও ছিলো রুপুর সাফল্যে পঞ্চমুখরিত
তারাও এখন নির্দ্বিধায় কটুবাক্যে দেয় ধিক্কার ,
প্রাণ হারালো রুপন্তি , মান হারালো বাবা ।

স্মৃতিচারণ
জোনাকী আক্তার

সময়ের কাছে আবদ্ধ আমি ,
তোমার কাছে স্বার্থপরতা ।
তারপরই এক দূর্ভেদ্য প্রাচীর.
যেনো কেউ কারো নই ।
কিন্তু দেখো , বিষন্ন বিকেল
ভাবনার প্রতীকে তোমার প্রতিচ্ছবি ,
না ভুলতে পেরেছো তুমি , না আমি ।
পিছুটান , আর কিছু স্মৃতি
মুক্তি দিবেনা তোমাকে কিংবা আমাকে
তবুও ভালো আছি , অনেক ভালো ,
মিথ্যার মুখোশে নিজেকে জড়িয়ে ।





বেলা শেষে একলা আমি
জোনাকী আক্তার
চাইনা তোমার জন্য নতুন করে রাত জেগে থাকতে
তবুও কেটে যায় একের পর এক নির্ঘুম রাত ,
চাইনা তোমার জন্য হৃদয়ের রক্তক্ষরণ
নোনা জল হয়ে ঝরুক ,
তবুও ঝরছে অবিরত দু নয়ন বেয়ে
তোমার জন্যই অনিমেষ ,
হয়ত থেমে যাবে সেদিন
যেদিন আমিই হবো শেষ ।
চাইনা তোমার জন্য গড়ে ওঠা শূণ্যতা আবারো করুক গ্রাস ,
পারিনা পূর্ণতায় ভরিয়ে দিতে
নি:সঙ্গতার সাথেই যে আমার বাস ।
পরম নির্ভরতায় তোমার পথ সঙ্গী হয়েছিলাম ,
চাইনা নতুন করে আর নির্ভরশীল হতে ,
তোমার জায়গাতে অন্য কাউকে বসাতে ,
কষ্ট হয় দিন শেষে যখন কেউ থাকে না পাশে ,
থেমে যাই তোমায় ভেবে
 চলছি আজও স্মৃতি গুলো আঁকড়ে ধরে,
কণ্টকাকীর্ণ একলা পথেই
শুধু তোমার জন্যই অনিমেষ ।

আমি কষ্টে নেই
জোনাকী আক্তার
কষ্ট পেতে পেতে কষ্টগুলোর সাথে,
মিশে একাকার হয়ে গেছি,
এখন আর কষ্টকে কষ্ট মনে হয়না,
কষ্টগুলোকে এত বেশি সহ্য হয়ে গেছে
তুমি তা ভাবতেও পারবেনা ।
এক সময় তোমার অভিমানগুলো
কুঁড়ে কুঁড়ে কষ্ট দিতো।
একটা দিন কথা না বলায়,
অঝোরে ঝরতো কষ্টের জল দু'নয়ন বেয়ে ।
জানো তো খুব কষ্ট হতো
তোমার প্রতিটা অবহেলা ,
মাঝে মাঝেই দূরে চলে যাওয়ার ভয়টা ।
তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে ,
তোমার থেকে দূরে থাকার ভয়ে ।
কত যে রাত কেটেছে নির্ঘুম ,
কত টা যে কষ্ট পেয়েছিলাম
তুমি তা ভাবতেও পারবেনা ।
যেদিন তুমি সত্যিই চলে গেলে,
সেদিন থেকে যেন পাথর হয়ে গেছি ।
তোমার জন্য , তোমাকে হারানোর জন্য
একদমই কষ্ট হয়না ।
কষ্টের বাণে জর্জরিত হয়েও
দিব্যি হাসতে পারি ,
চোখের জল ফেলেও
নির্বিঘ্নে বলতে পারি ,
আমি বেশ ভালো আছি
তুমি তা ভাবতেও পারবেনা ।

বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০১৭

ভালোবাসার ঘোর
জোনাকী আক্তার
তোমাকে দিবো বলে
ঘোর বর্ষণ মাথায় নিয়ে ,
বকুল ফুল এনেছিলাম পরম যত্নে ।
ফুলগুলোর মালা গেঁথেছিলাম
শুধু তোমাকে দিবো বলে ।
নাহ্, তোমাকে আর মালাখানা দেওয়া হয়নি।
কি করে দিবো বলো ?
মালা গাঁথা শেষ করে
বেড়িয়েছিলাম তোমার অন্বেষণে ,
পেয়েছিলাম তোমায় খোঁজে
কিন্তু তখন যে আর তুমি ছিলেনা ,
ছিলে অন্য কেউ, অন্য কারো ।
ফিরেছিলাম সেদিন চুপটি করে
নিরাশায় অশ্রু সিক্ত নয়নে।
কত আশা নিয়ে গিয়েছিলাম ছুটে
তোমার কাছে , তোমার ভালোবাসার জন্যে ।
নাহ্, তুমি কথা রাখোনি
ঠকিয়েছো আমায় তোমার ছলনায় ,
কাঁদিয়েছো মিথ্যা ভালোবাসায় ।
অন্ধ ছিলাম সেদিন,
ঘোর কেটেছে আমার ।
আজ বুঝতে পেরেছি
যা হবার নয় তা কখনোই হবেনা ,
মিছে তোমায় দোষ দিয়ে কি লাভ ?
আমার অদৃষ্টে যে তুমি ছিলে না ,
কি করে পাবো বলো ?

শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭



নর পিশাচ
জোনাকী আক্তার

মনে রেখো তুমি নারী ,
তোমার জন্মটাই একটা পাপ
তোমাকে বয়ে বেড়াতে হবে
আজন্ম পর্যন্ত সেই অভিশাপ ॥
তোমাকে সেই নারীত্বের জন্য
তোমাকে হতে হবে অনুভূতিহীন
তোমাকে হতে হবে কোন না কোন পশুত্বের স্বীকার ।
যদি না পারো সইতে
লোক লজ্জা আর বর্বরতা,
তোমাকে শেষ করে দিলেও রেহাই পাবেনা ,
তোমার শ্লীতহানি তখনো চলবে ।
যে হৃদয়ে ভালোবাসা জমা রেখেছিলে
সে হৃদয়ে চলবে মানুষরূপী দানবের আঘাত ।
তুমি তো অবলা - অসহায়
রক্ত মাংসের এক স্তুপ ,
তোমার কণ্ঠ নি:সৃত আত্ম চিত্‍কার
চার দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ ।
সেই বদ্ধ দেয়াল ভেদ করার নেই যে তোমার সাধ্য
হও তুমি যতই বালিকা কিংবা সাবালিকা
তোমার প্রতি অবিচারের
কান্নার আওয়াজ কারো কর্ণে যাবেনা ।
সবাই যে তাদের কার্য হাসিলে ব্যস্ত
কে করবে তোমার বিচার ?
কে শুনবে তোমার আত্মচিত্‍কার ?
স্রষ্টা ভিন্ন হয়তো তোমার প্রতি
অবিচারের সুবিচার হবেনা কোন দিন,
ঘুচবেনা মায়ের অশ্রু বিয়োগ
নিভবেনা বাবার পরিতাপ আর বিদ্বেষের অনল ।
শত ধিক তোমায়, ধিক তোমার পশুত্বকে
শিখোনি তুমি নারীকে দিতে সম্মান
মনুষ্য জাতির শ্রেষ্ঠ কুলাঙ্গার তুমি
মনুষ্যত্ব তোমার বেমানান ।


সোমবার, ৮ মে, ২০১৭

তুমি কি সেই
জোনাকী আক্তার
বলো তুমি কি সেই
যার দর্শন না পেলে
আঁখির দুকূল ছাপিয়ে
নোনা জলের ফোয়ারা নামে ।
বলো তুমি কি সেই
যার সমধুর কণ্ঠ
একটি বার শুনতে না পেলে
হৃদয়ের ব্যকুলতায় মম চিত্ত হয় অস্থির ।
বলো তুমি কি সেই
যার একটু ছোঁয়ায়
পাথরের ন্যায় হিয়াতেও
ভালোবাসার শিহরণ জাগে ।
বলো তুমি কি সেই
যার পদচারণ কল্পরাজ্যে
যাকে নিয়ে গড়েছিলাম
তাজমহলে ন্যায় ভালোবাসার প্রাসাদ ।
বলো তুমি কি সেই
শুধু একটি বার বলেই দেখো
আকাশ-বাতাস রটিয়ে দিবো
ভালোবাসি ভালোবাসি ।
একটি বার তোমার প্রতি বাড়িয়ে দেওয়া
প্রণয়ের হাতটি ধরেই দেখো
বলছি তোমায় চিরতরে তোমার হবো
দু:খ সুখের পথটি একসাথে পাড়ি দিবো ।

কেন এমন হয় জোনাকী আক্তার ************************** ভাঙা গড়ার খেলায় নিজেকে বারবার গড়ি, দু:খ-সুখের ভেলায় ঘুম ভাঙার মতই কেটে যায় সুখের রেশ...