সুপ্ত ভালোবাসা


দিনটি ছিলো শুক্রবার । শুক্রবার মানেই হরেক রকমের কাজের উত্‍পত্তির দিন। দিনটিকে শুক্রবার না বলে কর্মের জন্মদিন বলা উচিত ছিলো। সাপ্তাহিক ছুটির দিন যে ক্যান বলে , আমার মত গর্ধবের মাথাতে ঢুকে না। এই দিনে একবার যদি কাজ শুরু করি সন্ধ্যাবধি করতেই থাকা লাগে ।
তারপর আবার বাসাতে অতিথি আসবেন।আম্মু বলেছিলো, বাসাতে মামা আসবেন ।সাথে নাকি মামার এক বন্ধু আর বন্ধুর ছেলে আসবেন। আম্মু একলা হাতে আর কত সামলাবেন ? তাই আমিও টুকটাক কাজে আম্মুকে সাহায্য করি।
কাজ করার শেষ পর্যায়ে আম্মু বলে, বাসাতে যারা আসবেন । তারা আমায় দেখতে আসবে।যেহেতু আমার কোনো পছন্দের মানুষ নেই । তাই খুব একটা খারাপ লাগেনি কথাটি শুনে। আর তাছাড়া আম্মুর সাথে আমার বন্ধুত্বের মত সম্পর্ক। তাই আম্মুকে কিছুটা করেই বললাম , আসলে আসবে। এসে দেখে চলে যাবে । আমি কি করবো ? যা কাজ করার তা তো করেই দিলাম।

এবার আম্মু বলে , হয়েছে হয়েছে আপনাকে আর কাজ হবে না।এবার ঝটপট করে রেডি হয়ে নে। তোর মামা এসে দেখলে রাগ করবেন। যাচ্ছি বলেই রুমে চলে গেলাম রেডি হতে।কাজের চাপে বলতেই ভুলে গেছি , আমি নিতু । বাবা-মার আদরের বড় মেয়ে। আমরা দুইবোন, ছোটটার নাম নিশো।ছোটো এবার এসএসসি দিবে।আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়রিং এ চতুর্থবর্ষে আছি ।হুট করেই মামা তার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেন। আগে পিছে বিয়ে করতেই হবে , তাই আর দ্বিমত পোষণ করছিনা ।

বিকেলে মামা , মামার বন্ধু আর উনার ছেলে এলেন।আম্মু কিছুক্ষণ পর ডাকলেন কিচেনে যেতে। তাই রুম থেকে কিচেনে চলে গেলাম। সবার জন্য কফি নিয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম।সবাই খোশগল্পে আছেন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে । তার মাঝে মামা আবার রসিক মানুষ।যদিও আমরা সব ভাইবোনরা মামাকে বেশি ভয় পাই।

আমি কফির ট্রে টি টেবিলে রাখলাম। মামা সবাইকে দিতে বললেন।অগত্যা সবার হাতে দিতেই ছেলের সাথে চোখাচোখি হলে। ছেলে দেখতে ভালোই মনে হলো। সবাই কে কফি দেওয়ার পরে মামার পাশে বসলাম।কফিতে চুমুক দিয়েই ছেলের বাব বললেন , বাহ! দারুন কফি বানিয়েছো ত ।তারপর উনি আমার নাম , আর কোন সাবজেক্টে পড়াশুনি করি জানতে চাইলেন।আমি উত্তর দেওয়ার পরে , মামা বললেন ছেলে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে আলাদা ভাবে কথা বলতে।

আমি আগে আগে চললাম ,ছেলেটা পিছন পিছন আসলো। একটা চেয়ার টেনে দিয়ে ছেলে কে বসতে বললাম। উনি বসলেন ।আমিও খাটের উপর বসলাম কিছুটা মুখোমুখি।আসার পরে ছেলেটা কোনো কথাই বলেনি। মনে হচ্ছিলো খুবই কম কথা বলে।কিন্তু রুমে এসে প্রথম মুখ খুললেন। বলতে শুরু করলেন , "আমি নাহিদ। সাতটা বছরই দেশের বাইরে কাটিয়েছি। পড়াশুনার বাইরে কোনো জগত্‍ ছিলোনা। চেয়েছিলাম যাকে বিয়ে করবো , তাকে নিয়েই আমার ভিন্ন এক জগত্‍সাজাবো। " এরপর থেমে গিয়ে বললেন , এই যা একাই বক বক করতেছি। তোমাকে কোনো কথাই বলার সুযোগ দিচ্ছিনা। তোমার কি কোনো পছন্দের মানুষ আছে ? থাকলে বলতে পারো । আমি বাবাকে বুঝিয়ে , বিয়েটা বন্ধ করে দিবো । আর একটা কথা , তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে । কিন্তু আমার মত অধম কে তোমার পছন্দ হলো কিনা। সেটা ত বুঝতে পারছিনা

উনার কথাতে আমি হেসেই বললাম , আপনার এমন হ্যান্ডসাম আর স্মার্ট ছেলে কি কখনো প্রাচীনযুগের হতে পারে ? এই কথা শুনে উনিও হেসে দিলেন। এরপর আমার ফোন নাম্বার চাইলেন। আমি নাম্বার দেওয়ার পরে উনি আমার ফোনে কল দিলেন। আর বললেন , যদি কিছু বলার থাকে তবে যেনো ফোনে নি:সংকোচে জানাই। আমিও ঠিক আছে বললাম।হঠাত্‍ উনার চোখ গেলে আমার টেবিলের উপর। টেবিলের উপর বেশ কিছু কবিতার বই আর উপন্যাস রাখা আছে । কৌতূহলের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন , তুমি গল্পের বইও পড় ?বললাম , কেন পড়বো না ।আমার অবসর সময়টাই কাটে বিভিন্ন বই ঘেটে। উনি বললেন , বাহ! ভালো ত ।আমি ত ভেবে ছিলাম মেয়েরা সিরিয়াল দেখেই টাইম পাস করে। কিছুটা রাগের স্বরেই বললাম ,সিরিয়াল দেখা অপরাধ নাকি ?উনি হেসে উঠেন এমন কথা শুনে।কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলেন এমন সময় ছোট বোনের আগমন। আম্মু ডাকছে , তাই নীচে যেতে হবে। তাই সবাই ড্রয়িংরুমে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ গল্প করে , খাওয়ার পর্ব শেষ করে উনারা চলে গেলেন। আম্মুর কাছে যা শুনলাম , পরের সপ্তাহে ছেলের মা,ফুফু ,খালা , আর কাকী আসবেন।ছেলের কাকা দেশের বাইরে থাকায় আসতে পারবেনা । তবে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হবার পরেই চলে আসবেন। উনারা আসার পরেই দিন তারিখ ঠিক করা হবে।আম্মুর এমন আলাপ আর শুনতে ভালো লাগছেনা , তাই নিজের রুমে চলে এলাম।

সারাদিনে সন্ধ্যাবেলা ফ্রি হলাম ।একটু ফ্রেশ হয়েই ফেসবুকে লগ ইন করলাম। ফেসবুকে ঢুকে প্রথম কাজ নটিফিকেশনটা চেক করা।তারপর ইনবক্স চেক করি ।দেখি অভি টেক্সট করেছে,ওই মেম ,কই আপনি ? সবার টেক্সটের উত্তর দিয়ে অভির টা ওপেন করলাম।
বাসাতেই আছি লিখে পাঠিয়ে দিলাম। একটু পরেই অভির উত্তর আসে।

অভি- সারাদিন ছিলেন টা কই ?
আমি- বাসাতেই ছিলাম ।তবে একটু কাজে ব্যস্ত ছিলাম।তাই অনলাইনে আসতে পারিনি।

অভি- সারাদিন কি এমন কাজ করলেন যার জন্য অনলাইনে আসতে পারলেননা ?
আমি- অনেক কাজ করেছিলাম। বাসাতে মেহমান আসছিলো। একটা সুসংবাদ আছে তোমার জন্য।
অভি-বলেন , বলেন ।অনেকদিন কোনো সুসংবাদ শুনিনা।
আমি-আজকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছিলো। মামার এক বন্ধুর ছেলে ।দেশের বাইরে থেকে পিএইডি করে আসছে।এখন একটা প্রাইভেট ভার্সিটি আর একটা সফটওয়ার কম্পানিতে চাকরি করেন।

অভি- এ তো দেখছি শুধু সুসংবাদ না।মহা সুসংবাদ।কংগ্রেস , মেম। (অভি আমাকে মেম ডাকে। তাই আপনি করে সম্বোধন করে ।যদিও আমি ওর এক বছরের জুনিয়র ।তবে অনেক ফ্রেন্ডলি আমরা।)
আমি- রাখো তোমার কংগ্রেস । আগে দিন তারিখ ঠিক হোক ।তারপরেই না হয় বইলো।
অভি-দিন তারিখ ঠিক না হলে কি খুশি হবেন আপনি ?
আমি-খুশিও হবোনা, আবার কষ্টও পাবোনা।তবে ভাবতেছি বিয়েটা করেই ফেলবো।
অভি-ঠিক আছে তাই কইরেন।

তারপর আর অভির কোনো সাড়া পেলাম না।

কিছুক্ষণ পরে অভিকে আবার নক করি।
আমি- কি বেপার, মন খারাপ তোমার ?
অভি-না,মেম। এমনই ভালো লাগছেনা কিছুই।
আমি-কি এমন হলো যে,ভালো লাগছেনা তোমার ?শরীর খারাপ করেনি ত আবার ?
অভি- না, মেম। আমি একদম ঠিক আছি।মেম, একটা কথা বলবো ?
আমি- হুম বলো ,কি বলবে ?
অভি- কালকে কি একবার দেখা করতে পারবেন।যদি হাতে কোনো কাজ না থাকে আপনার।তবে সকালে বারটার দিকে বনানীতে ১১ নাম্বার রোডের বাম পাশে যে প্রথম রেস্টুরেন্টটা আছে সেখানে আসবেন , প্লিজ।
আমি- কোনো কিছু না ভেবেই, ঠিক আছে আসবো বলে দিলাম।মনে মনে ভাবছি কি হলো , হুট করে দেখা করতে বলতেছে।
অভি-ঠিক আছে।কালকে দেখা হবে।
শুভ রাত্রি বলেই বিদায় জানালো।

পরের দিন সকালে বনানীতে গেলাম। অভি যে রেস্টুরেন্টর কথা বলেছে ,সেটা ফুজি রেস্টুরেন্ট।ভেতরে গিয়ে বসলাম । অভিকে একটা এসএমএস দিলাম যে,আমি চলে আসছি। অভি উত্তর দিলো , মেম একটা কাজে আটকে গেছি বিশ মিনিট অপেক্ষা করেন। আমি চলে আসবো । অত:পর কি আর করা , বিশ মিনিট অপেক্ষা করতেই হবে। এক কাপ কফি অর্ডার দিয়ে ভাবছি , কি এমন দরকার যে হুট করে দেখা করতে বললো |

অভির সাথে আমার পরিচয় প্রায় তিন বছর হলো। এতো দীর্ঘ চেনা জানার মাঝে একদিনও দেখা করতে বলেনি। এমনকি ফোনেও কথা হয়নি আমাদের। আমাদের ফেসবুকের মাঝেই সীমিত ছিলো।
নাহ, মাথাতে কিছু ঢুকছেনা । কেন আসতে বললো আমাকে ?
অভির সাথে আমার দেখা হয়েছিলো প্রায় বছর আগে। ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটিতে একটা ট্রেনিং ক্যাম্প করা হয়েছিলো।ধানমন্ডিতে এই ভার্সিটির ক্যাম্পাস তিনটা। কিন্তু কোন ক্যাম্পাসে ক্যাম্প সেটা জানিনা। তাই প্রথম যে ক্যাম্পাসটা সামনে পড়লো ।ভেতরে ঢুকে গেলাম।গেইটের পাশে ক্যান্টিনের সামনে অভি দাঁড়িয়ে আছে। আর কাউকে না পেয়ে , অভির কাছেই জানতে চাইলাম কোন ক্যাম্পাসে ক্যাম্প টা হচ্ছে।

অভি বললো , এখান থেকে দশ মিনিট হেঁটে গেলেই সামনে দেখতে পাবেন।এরপর বললো , যদি না যেতে পারেন । একটু অপেক্ষা করেন আমিও যাবো। অভিকে একটা ছেলে নোট খাতা হাতে দিয়ে চলে গেলো। এরপর অভি আর আমি চললাম ক্যাম্পের দিকে। পথিমধ্যে, অভি জানতে চাইলো কোথা থেকে আসছি? সাথে কে আসছে।বললাম সাভার থেকে সাথে কেউ আসেনি। এটা শুনেই অভি বললো , এতো দূরে থেকে একা ক্যান আসছি ? সাথে কেউ না আসলে একাই ত আসতে হবে।
তারপর দুজনেই চপচাপ হাঁটছি। অভি নিরবতা ভেঙে বললো চলে আসছি। আর হ্যা ভালো করে ক্লাস করবেন। আমি ক্লাস রুমে ঢুকে যাই। একটুপর দেখি ট্রেইনারদের সাথে অভিও আছে । ক্লাস করতেছিলাম , কিন্তু একটা ছোট্ট বিষয় বুঝতেছিলাম না । অভি এসে বলে , কি ব্যাপার আপনাকে নার্ভাস লাগতেছে কেনো ? যদি না বুঝে থাকেন , সেটা রেখে দিন । পরে আমি বুঝিয়ে দিবো। নতুন যা শিখাচ্ছে তাতে মনোযোগ দিন।এরপর আমার থাতার উপর ফোন নাম্বার আর ফেসবুক আইডি টা লিথে চলে যায়।ট্রেনিং শেষ করে অভিকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালাম।রাতে এক্সেপ্ট করেই বললো , কেমন করলেন ক্লাস ? আর কি বুঝেননাই দিন আমাকে।এই ভাবেই অভির সাথে কথা বলা শুরু হয়।কত রাত জেগে একসাথে কাজ করেছি তার কোনো হিসেব নেই।

কখনো একটা কম্পিউটারেই কাজ করেছি। একটা সমস্যা না বুঝলে অভি সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়।
এতোক্ষণ ধরে অভি অভি করে যাচ্ছি ।তার পরিচয়টাই দেইনি এখনো।অভি হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার ডিভিলোপার। মাঝে মাঝে প্রোগ্রামিং ও করে থাকে। এখন পড়াশুনা শেষ করে একটা ফার্মে চাকরি করে।বাবা মার একমাত্র ছেলে।ভাইবোন না থাকায় রাগ টা একটু বেশি।
ভাবতে ভাবতে কখন যে বিশ মিনিট ফুরিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।অভি আমনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা , সাদা শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করে রাখা।সবই ঠিক আছে। কিন্তু মুখে হাসি টার চিহ্ন দেখতে পাচ্ছিনা।কোনো দুশ্চিন্তার ছাপ দেখতে পাচ্ছি ।অভি আমার সামনের চেয়ারে বসলো।

অভি- স্যরী মেম, আপনাকে এতক্ষণ বসিয়ে রাখার জন্য।
আমি -আরে স্যরী বলতে হবেনা। কি হয়েছে তোমার ? মুখটা অমন শুকনো লাগতেছে ক্যান ?
অভি- আসলে মেম তেমন কিছুই হয়নি।একটা সমস্যা হয়েছে আপনাকে সাহায্য করতে হবে।বলেন হেল্প করবেননা ?
আমি- তোমার সমস্যা আর আমি হেল্প করবোনা , তা কি করে হয়? তুমি শুধু বলো আমাকে ।
অভি-আসলে মেম, কিভাবে বলবো ভেবে পাচ্ছিনা।
আমি-ভাবাভাবি বাদ দাও বলে ফেলো ত।
অভি দুইটা কোল্ড ড্রিংকস অর্ডার দিলো।
অভি- মেম ,বিয়েটা করবেননা প্লিজ।আমি জানি, আপনি আমার কথা শুনে বিস্মিত হচ্ছেন।কিন্তু এ ছাড়া বলার কোনো উপায় খোঁজে পাচ্ছিলামনা। আপনি যখন আমাকে বললেন , আপনি বিয়ে করতে চাচ্ছেন। সেই মুহূর্তে আমার নিজের ভেতর শূণ্যতার তৈরি হয়েছে।

সব সময় মনে হচ্ছে আমি এমন কিছু হারাতে চলছি ।যাকে ছাড়া আমি সত্যিই অচল।আপনি আমাকে ভাবে বুঝেছেন , তেমন আর কেউ আমাকে বুঝতে পারতে পারবেনা। আপনার সাথে রাগ, অভিমান , দুষ্টুমি আমি কখনোই ভুলতে পারবোনা। যা আমাকে সারা জীবনই কষ্ট দিবে।আমি পারবোনা মেম, আপনাকে ছাড়া এতটা কাছের ভাবতে।আপনাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।যা আমিই জানিনা।
আমি-কিন্তু আমার ত বিয়েটা ঠিক-ই হবে মনে হচ্ছে।কি করবো আমি ?(অভির সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি জমা আছে।কিন্তু কখনোই মনে হয়নি ও আমাকে ভালোবাসা , আর আমি ওকে ভালোবাসি।কিছুদিন আগে বাসাতে রাগ করে রাতে খাইনি।অভি জানতে চেয়েছিলো খেয়েছি কিনা। খাইনি বলাতে প্রচণ্ড রাগ করেছিলো।তারপর বলেছিলো , এখন আমিও খাবো, সাথে আপনাকেও খেতে হবে।যদি আপনি না খান,তাহলে আমি খাবোনা।কি আর করা ওর কথামত সেদিন খেয়েছিলাম।তবুও মনে হয়নি ও আমাকে ভালোবাসে।

একটা প্রতিযোগীতাতে হেরে যাওয়ায়, মন খারাপ ছিলো অনেক।অভি জানতে চেয়েছিলো কেমন আছি ?উত্তরে বলেছিলাম মারা গেছি। এই কথা শুনেও রাগ করেছিলো। সবাই কে কি জিততে হবে এমন কোনো কথা আছে ?আবার যদি কখনো এমন কথা শুনি , তবে আপনার খবর আছে। বলেছিলাম ওকে আর বলবোনা।তুমি কেমন আছো ? অভি বলেছিলো, আপনি এমন করলে আমি কি করে ভালো থাকি বলেন ত ? আমি এতই মূর্খ ছিলাম সেদিনও বুঝিনি,ও আমাকে ভালোবাসে। )

সুপ্ত ভালোবাসা
পার্ট-৫

অভি-আপনি কি পারবেন অন্য কাউকে বিয়ে করতে ? যদি পারেন তাহলে আমি কিছুই বলবো না।

আমি-(অভিকে কি বলবো বুঝতেছিনা। চোখের সামনে একটা মানুষকে এতোটা কষ্ট পেতে দেখে আমার খুবই মায়া হচ্ছে। কি করবো আমি ?কি করা উচিত আমার?বাসাতে এখন পছন্দের কথা জানাতে পারবোনা। আগে জানতে চেয়েছিলো তখন বলিনি।আবার আব্বু,আম্মুকেও কষ্ট দিতে পারবোনা।)আমাকে ভাবতে হবে ।তুমি এভাবে ভেঙ্গে পড়োনা প্লিজ।দেখি বাসাতে যাই কিছু ভেবে পাই কিনা ?

অভি-ঠিক আছে, যান।কালকে ধানমণ্ডিতে আসতে পারবেন? এক সাথে বুদ্ধি বের করবো।আর আপনাকেই বা কি বলবো ?আমারই দোষ আগে জানাতে পারিনি মনের কথা।জানাবোই বা কি করে , নিজেই ত জানতাম না।

আমি-আরে ধুর ।এতো ভেবোনা ত।ওর মা,খালারা এলে, পছন্দ হলে তারপর ত কথা পাকা করা হবে।যদি ওদের পছন্দ না হয়?

অভি ওয়েটারকে ডেকে বিল পরিশোধ করলো । একটু পরে দু'জনে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম। দু'জনে হাঁটছি চুপচাপ, কোনো কথা হলোনা আমাদের মাঝে ।রাস্তা পার হয়ে সাভারের বাসের জন্য অপেক্ষা করতেছি। অভিকে বললাম , তুমি চলে যাও । আমি বাসে উঠে যেতে পারবো। অভি হেসে বলে , আরে নাহ। আপনাকে আগে বাসে তুলে দিবো, তারপরে যাবো। এমনিতেই ত আপনাকে একটা দুশ্চিন্তার মাঝে ফেলে দিলাম । এখন আবার রাস্তাতে একা ছাড়ি কিভাবে ?একটা বাস আসতে দেখে বললো , মেম বাসে থাকা অবস্থাতে কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না। সাবধানে যাবেন ।ঠিক আছে বলেই বাসে উঠে পড়লাম।


বাসাতে আসলাম , ফ্রেস হলাম। কিন্তু মাথার ভেতর একটা চিন্তাই কাজ করছে । কি করা উচিত আমার ?
একটু পরে আম্মুর ডাক এলো ,দুপুরের খাবার খেতে বলছে ।চিন্তাতে কোনো কিছুই খেতে ইচ্ছা করছেনা । তাই অল্প খেয়েই নিজের রুমে চলে আসি । মাথা ধরেছে অনেক একটু ঘুমাতে হবে ।তাই ফোনটা হাতে নিলাম , একটা গান শুনেই ঘুম দিবো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি অভির মেসেজ । মেম, বাসাতে চলে গেছেন ? হুম ,চলে আসছি লিখে অভির নাম্বারে পাঠিয়ে দিলাম। তারপর আর কোনো উত্তর পেলাম না ওর কাছ থেকে । হয়ত কাজে ব্যস্ত আছে। যখন কোনো কারনে চিন্তাতে থাকি । কিংবা মন খারাপ থাকলে লালন সাঁই এর গান শুনি। উনার গানের মাঝে আধ্যাতিক কিছু টান অনুভব করি ।মন খারাপ টা বেশিক্ষণ আর থাকে না। অত:পর সাঁইজির গান ছেড়ে দিয়ে শুয়ে আছি চোখ বুজে। গান বাজছে :-

" তোমার ঘরে বাস করে কারা - ও মন জানো না
তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা - মন জানো না
তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা?

একজনে ছবি আঁকে একমনে - ও হো ও মন
আরেকজন বসে বসে রঙ মাখে - ও হো ও মন
ওহো আবার - সেই ছবিখান নষ্ট করে কোন জনা
কোন জনা?

একজন সুর তোলে এক তারে, ও হো ও মন
আরেকজন মন্দিরাতে তাল তোলো, ও হো ও মন
ওহ আবার বেসুরা সুর ধরে দেখো কোন জনা
কোন জনা?

তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা - মন জানো না! "





শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি করি করবো ? কার কাছে সাহায্য চাইবো ? আম্মুকে জানাবো কিনা ? কিন্তু মন কোনো টাই সাই দিচ্ছেনা।আম্মুকে বলে কোনো লাভ হবেনা ।আব্বু এই সব প্রেম ভালোবাসা পছন্দ করেনা। তার উপর আমাদের পরকিবারে ভালোবাসার বিয়ে সাপোর্ট করেনা। বড় আপুদেরও পারিবারিক ভাবে বিয়ে দেয় তার মাঝে এক খালাতো বোন ভুল করে। এক সময় আপু আর আমার মাঝে খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। আপু ভেবেছিলো বাসাতে না জানিয়ে বিয়ে করলে হয়তো মেনে নিবে পরে। ও তাই করেছিলো। এক বছর পার করে দিলেও সে জানাতে পারেনি বিয়ে করেছে। সবাই জানতে পারি , যখন সে ব্যাবি কনসিভ করে ।সবাই মেনে নিয়ছিলো তখন ।খুশিই হয়েছিলো আপু ।কিন্তু সে মেনে নেওয়াটা যে সাময়িক ছিলো, সেটা আমাদের ভাইবোনদের সার্কেলের কেউই বুঝতে পারিনি। আমাদের মামাত -খালাতো ভাইবোন একদম বন্ধুর মত। বড় ছোটোর মাঝে কোনো বাচ-বিচার নেই।কেউ ছোট খাটো ভুল করলে , সেটা নিজেরাই চেষ্ট করি সমাধান করতে। আপুর এক ছেলের জন্ম হয়। আপুর ছেলেটার বয়স যখন দুই বছর , তখন খালামণিরা গ্রামে চলে যান আপুকে সাথে করে। এটা যে অভিভাবকদের পরিকল্পিত ছিলো , বুঝতে পারেনি আপু।

গ্রামের যাবার পরে আপুদের মাঝে ডিভোর্স হয়। ডিভোর্সের সাতদিন পরেই অন্যত্র বিয়ে দেওয়া হয়।তারপর থেকে আর আপুর সাথে আমাদের কারো যোগাযোগ নেই। আপুর ছেলেটা খালামণির কাছেই বড় হচ্ছে। আপু শুধু একটা কথায় বলেছিলো ফোনে , নিতু যত ভুলই করস না ক্যান , কাউকে ভালোবাসবিনা ।
আপুর সাথে এমন অমানষিকতা দেখে আমার প্রেম , ভালোবাসাকে প্রচণ্ড ভয় করে। সেজন্য কাউকেই ভালোবাসিনি।কিন্তু অভির উপর আমার মায়া পড়ে গেছে।এ মায়ার বাঁধন এমনই শক্ত। তা ছিন্ন করা আমার কাছে দু:সাধ্য মনে হচ্ছে।যখনই নাহিদকে বিয়ে করার ভাবছি , মনে হচ্ছে একজনকে খুন করতে চলছি।একবার মনে হচ্ছে আপুকে ফোন করে সব বলি।তারপর আবার পিছিয়ে যাই ওরে বললেও কোনো লাভ হবেনা । শুধু শুধু আরো ঝামেলা হবে। এমন কি আমার উপর থেকে সবার বিশ্বাসটাও চলে যাবে। এই রকম আবোলতাবোল ভাবতে ভাবতে কখন যে সন্ধ্যা হয়েছিলো টেরই পাইনি।আম্মু রুমে এসে লাইট অন করে বলে, কি ব্যাপার এখনো যে শুয়ে আছিস।শরীর খারাপ করেনি ত ? বাসাতে আসার পর থেকেই দেখছি অন্যমনস্ক। দুপুরের খাবারটাও ঠিকমত খেলিনা। সমস্যাটা কি বল ত ?
কিছু হয়নি । এমনিতেই একটু মাথা ধরেছে।তুমি কড়া লিকারে এক চা করে দিতে পারবে ?পাঠিয়ে দিচ্ছি বলেই চলে গেলো।

আধা ঘন্টা পরে ছোট বোনটা দুই কাপ চা হাতে রুমে ঢুকে।সন্ধ্যার পরে নামায আদায় করার পরে, দুইবোনের চা আড্ডা চলে বেলকনিতে।কখনো আম্মুও সাথে থাকে। তিনজনের আড্ডা দেখলে , কেউ বলবে না মা-মেয়েদের আড্ডা চলতেছে।
চা হাতে নিয়ে বেলকনিতে বসলাম।চুপচাপ চা খাচ্ছি। ছোট বোন বলে ,তোমার মন খারাপ নাকি ?এমন চুপচাপ যে। তুমি এমন চুপচাপ থাকলে আমারও মন খারাপ হয়ে হয়, তুমি জানোনা ?আরে নাহ , মন হচ্ছেনা। আসলে ভাবতেছি , বিয়ে করলে ত তোদের ছেড়ে দূরে চলে যাবো। নতুন বাসার মানুষগুলো কেমন হবে ?খিটখিটে হবে নাকি আমাদের মত বন্ধুসুলভ হবে। ও হি হি করে হেসে বলে ,আপু ওরা ওই রকম কিছুই হবেনা ওরা।সবাই রোমান্টিক হবে।তবে তোমাকে অনেক মিস করবো।ইচ্ছা করছে, তোমাকে আমাদের কাছেই রেখে দিতে।যদি তা রাখতে না পারি তোমাদের ওইখানেই থাকবো আমি। হয়েছে এখন তোকে ওসব ভাবতে হবে না। যা পড়তে বস।আমারো ক্লাসের কিছু কাজ আছে। ওরে বিদায় দিলাম , ক্লাসের কাজ কোনো রকম শেষ করে অনলাইনে ঢুকলাম। ঢুকে দেখি অভির টেক্সট । কেনো জানি অভির সাথেও কথা বলতে ইচ্ছা করছেনা। মনে হচ্ছে যদি ওকে বিয়ে করতে না পারি তবে ত মায়া টা আরো বেড়ে যাবে। তার থেকে ভালো কম্পিউটারে কিছু কাজ করি। যেই ভাবা সেই কাজ ।ন'টা বাজার পরে আম্মু রাতের খাবার থেতে ডাকে।খাবার খেয়ে রুমে চলে আসলাম । রুমে এসে শরত্‍চন্দ্রের " শেষ প্রশ্ন " বইটা ঘাটতেছি।

মিনিট পাঁচেক পরে নাহিদের নাম্বার থেকে কল আসে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা রিসিভ করলাম। কেমন আছি ,কি করতেছি , কি পছন্দ -অপছন্দ এইসব টপিকে কথা চললো চারমিনিটের মত।এরপর অভিকে একটা টেক্সট করে দেই , চারটার দিকে ধানমণ্ডির লেকে থাকবো।হাতের কাজ সেরে ঘুমাতে চলে যাই।নানান বিষয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম টের পাইনি।ভার্সিটিতে যাবার আগে আম্মুকে বললাম , ফিরতে একটু দেরি হবে। চিন্তা করোনা।আম্মু ঠিক আছে, সাবধান যাস বললো।
ক্লাস করে ধানমণ্ডি তে গেলাম। একটু চারটা বাজার আগেই। গিয়ে দেখি অভি চলে আসছে।

আমি-আরেহ। তুমি কখন এলে ?
অভি- একটু আগেই চলে আসলাম।একই টাইমে প্রায় ।চলেন , বসি কোথাও।
আমি-হুম,চলো।
অভি-মেম, এই যে আমরা দুজনে পাশাপাশি হাঁটতেছি। আমাদের কি সত্যিই এমন ভাগ্য আছে , যেনো সারাজীবন এমন ভাবে হাঁটতে পারি?
আমি-জানি না। ( এটা বলেই অভির দিকে তাকালাম।অভিও আমার দিকে তাকালো। চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারছিনা ,কত অসহায় সে নিজেকে মনে করছে। তবে বুঝা যাচ্ছে সারা রাত ঘুমাতে পারেনি।) অভি, রাতে কি তুমি ঘুমাওনি?মুখ দেখে ত মনে হচ্ছে খাবারও ঠিক মত খাওনি।আমি কোথাও বসবোনা , চলে এখন রেস্টুরেন্টে যাবে। কিছু খাবে আগে।তারপর যা ভাবার ভেবে নিবো। আর হ্যা, তোমার হাতটা দাও ত।
অভির হাত ধরে বললাম , তোমার হাত যখন ধরেছি যখন অত সহজে ছাড়ছিনা। তোমার দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। যা করার আমি করবো।ঠিক মত খাবে ঘুমাবে।অভি বলে , না না মেম তা কি করে হয় ? আপনি একাই চিন্তা করবেন। আর আমি আরামসে খাবো+ঘুমাবো ? এ হতে পারেনা। আচ্ছা , আচ্ছা দুজনেই ভেবে দেখবো।শেষ রক্ষা না হলে নিয়তির উপর ছেড়ে দিবো। তারপর দুজনে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম।
অভির পছন্দ মত খাবার অর্ডার করলাম।


এতোদিনের পরিচয়ে অভির পছন্দ, অপছন্দ সবই জেনে গেছি।খাবার চলে আসলো। অভিকে বললাম , খাওয়া শুরু করতে।
অভি-মেম, একটা কথা বলি ?
আমি-হুম, বলো।
অভি- আপনাকেনা কেনো জানি বউ বউ লাগতেছে।
আমি- বিয়ে না হতেই তোমার বউ বউ লাগলো ক্যান শুনি?( রাগী মুডে বললাম)
অভি- আরে আরে , রাগ করতেছেন ক্যান ? আপনি যে খাবার সামনে নিয়ে বসে আছেন। তাই মনে হচ্ছিলো আর কি।
আমি- তুমি না বেশি কথা বলো। খাবার খেতে বসে বেশি কথা বলতে নেই।।
অভি- ঠিক আছে। আর কথা বলছিনা এখন।তবে , আপনাকে যদি আমাদের বাসাতে নিয়ে যেতে পারি। তারপর দেখবেন, কানের কাছে বক বক করতে করতে , কান ঝালাপালা করে দিবো।
আমি- সে পরে দেখা যাবে। এখন খাও ত।

অভি চুপচাপ খাবার খেয়ে নিলো।

অভি - মেম, আপনি যদি বলেন তাহলে আম্মুকে আপনাদের বাসাতে পাঠাবো।বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে ত কিছুই করার থাকবেনা।তার থেকে ভালো , আম্মু সব খোলে বলবে।
আমি-আন্টিকে পাঠানো যাবেনা এখন।আন্টি এসে বললেও কোনো লাভ হবেনা। আরো জেদ করে অন্যখানে বিয়ে দিবে। মাঝে আমাকেও দোষারোপ করবে।
অভি-তাহলে কি করবেন , বলেন? আপনাকে হারিয়ে ফেললে, আমার মাঝে আমি আর থাকবোনা।
আমি- তুমি আমাকে হারাবেনা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।উনি যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন। আর আমাকে বিশ্বাস করো ত ? আমি যদি না হারিয়ে যাই , তবে কি করে হারাবে তুমি স্রষ্টা না চাইলে ?
(অনেকক্ষণ অভিকে বোঝালাম। বাসাতে ফিরতে হবে।এখন চলে যাচ্ছি অনলাইনে কথা হবে। এরমাঝে হয়তো আমাদের আর দেখা হবেনা। মাঝে দুইদিন আমার ক্লাস নেই।আর বাসা থেকেও বের হতে পারবোনা।


অভি- কবে দেখা না হবে , সেটা এখন ঠিক করবে না। আপনি বাসাতে যান। অনলাইনে কথা হবে।




বাসাতে ফিরার পথে নিশোর জন্য এক সেট চুড়ি কিনে ফিরলাম। কিছুদিন আগে আমাদের বাসাতে ওর বান্ধবীরা আসে।ওর এক বান্ধবীর হাতের চুড়ি পছন্দ হয়েছিলো।ওরা চলে যাবার পরে বলেছিলো, আপু স্নেহার চুড়িগুলো অনেক সুন্দর।তার মানে ওকে কিনে দিতে হবে।যদিও মুখে বলছেনা।হয়ত ঝাড়ি খাবার ভয়ে।এটা সেটা দেখলেই কিনে চাইতো। এটা ওর ছোট থেকেই স্বভাব।তবে এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।কিনে না চাইলেও পছন্দের জিনিসটার কথা বার বার বলবে।তখনই বুঝে ফেলি , ওরে কিনে দিতে হবে।তবে অবশ্য সেদিন বলিনি যে কিনে দিবো পরে।এর মাঝে সময় পাইনি, ইচ্ছাও করেনি। তাই আজকে কিনে নিয়ে যাচ্ছি।কিছুটা অভির সাথে দেখা করার জন্য যে দেরি টুকু হয়েছে, সেটা ঢেকে রাখার জন্যই।বাসাতে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই প্রায়।আম্মু রুমে ঢুকতেই দেরি হবার কারন জানতে চাইলো।আমি নিশোর চুড়ি বের করে দিলাম।তারপরে আর কিছুই বললো না।

নিশোকে ডেকে চুড়ি দিতেই খুশিতে নাচা শুরু করে দিছে। ওর মুখে এমন তৃপ্তির ছায়া দেখে আমার সমস্ত দুশ্চিন্তা যেনো চলে গেছে।জানতে চাইলাম, কি ব্যাপার পছন্দ হলো ?ও বললো হইছে মানে ?সেদিন তোমাকে কিনে দিতে বলতে চেয়েছিলাম।যদি তুমি কিছু বলো , তাই আর বলতে পারিনি। হুম, সে তো আমি বুঝেছিলাম তোর মুখ দেখেই।নিশো বললো, সেজন্যই তুমি আমার কিউট আপু।মুখে না বলতেই তুমি বুঝে ফেলো। ওর সব আবদার আমিই পূরণ করি।যা লাগে আব্বু,আম্মুকে না বলে আমাকেই বলবে।প্রজেক্টের কাজ করে যা উপার্জন করি।তাতে আমাদের দুইবোনের খরচ স্বাচ্ছন্দ্যে চলে যায়। তারপর ফ্রেস হতে চলে গেলাম।মাগরিবের নামায আদায় করে, খেতে গেলাম নীচে। তারপর রুমে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। হাতে কোনো কাজ নেই তেমন।ভার্সিটি অফ মানে আমার ক্লাস নেই।তাই ক্লাসেরও কোনো পড়া আজকে পড়তে হবে না।তাই অনলাইনে ঢুকলাম।দেখি অভি একটা প্রজেক্টের জন্য টেক্সট করেছে।যেহেতু কোনো কাজই নেই।তাই প্রজেক্টের কাজটি করবো বলে উত্তর দিলাম।ভালোই হলো আবারো একসাথে কাজ করা যাবে।প্রজেক্টের কাজ করলাম সারা রাত জেগে। এর মাঝে রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছিলাম।

মাঝে কখন বাসাতে ফিরেছি , অভি কখন ফিরেছে জেনে নিয়েছিলাম।ফজরের আজান দেওয়ার পরে নামায পড়ে বাকি কাজ টুকু করতে বসছিলাম।কিন্তু অভির অনুরোধে তা আর করা হয়নি। শেষ না করেই ঘুমাতে যাই। অভিকেও ঘুমাতে বলে। যদিও অভি রাতে ঘুমায়না।ছ'টা থেকে ন'টা পর্যন্ত ওর ঘুমানোর সময়।তারপরে দশটা বাজে অফিসে চলে যায়।নয়টার দিকে ঘুম ভাঙ্গে ফোনের রিংটোনে।ক্লাস না থাকলে আম্মু সকালে ডাকে না।জানে সারা রাত জেগে থাকি। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি নাহিদের কল।

আমি-হ্যালো, আসসালামু ওয়ালাইকুম।
নাহিদ-ওয়ালাইকুম আস্ সালাম। শুভ সকাল। কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে এখনো ঘুমাচ্ছো।অসুস্থ নাকি ? এতো সকাল অবধি কেউ ঘুমায় নাকি? ক্লাসে যাবে না?
আমি- এক সাথে এতো গুলো প্রশ্ন করলেন।উত্তর দিবো কি করে ? সবই প্রশ্ন শুনার পর পরই ভুলে গিয়েছি ত।
নাহিদ-হা হা হা, তুমি ত খুব মজার মানুষ। এক সাথে এতো উত্তর দিতে হবে না।এখনো ঘুমাচ্ছো ক্যানো সেটাই শুধু বলো।
আমি- আসলে রাত জেগে একটা প্রজেক্টের কাজ করেছিলাম।সকালের দিকে ঘুম আসছিলাম।তাই এখনো ঘুমিয়েই আছি। তা ছাড়া আজকে ক্লাস নেই।ঘুম থেকে উঠারও তাড়া নেই।
নাহিদ-ও আচ্ছা।তাহলে ঘুমাও।স্যরি তোমার ঘুমটা ভেঙ্গে দিলাম।

আমি-সেজন্য আপনাকে স্যরি বলতে হবে না। আমি এখনই উঠে পড়বো। তো কি মনে করে এতো সকাল সকাল আমাকে কল দিলেন?
নাহিদ- আসলে সেদিন দেখা হবার পরে ত আর আমরা একান্ত ভাবে কথা বলিনি।তাই ভাবছিলাম , তুমি যদি রাজি হও তবে আজকে দু'জনে একসাথে বের হবো।যদি তোমার কোনো আপত্তি না থাকে , বিকেলে কি পারবে আশুলিয়াতে চলে আসতে?তোমার সাথে কিছু সময় কাটাতাম। আমাদের ত দু'জনকে জানতে হবে তাই না ?
(আমি ত পড়ে গেলাম মহা বিপদে।উনার সাথে ঘুরতে বের হতে পারবোনা।আবার না করতেও পারবোনা। কেমন না কেমন মানুষ।ইচ্ছাই করছেনা উনার সাথে বিকেলটা কাটাতে।অভির কথা মনে পড়ছে।ও জানতে পারলে অনেক কষ্ট পাবে।)
আমি-হুম, সেটা অবশ্য ঠিক বলছেন।একসাথে কিছুটা সময় কাটালে দু'জনেই নিজেদেরকে জানতে পারবো।তবে আজকে বাসাতে কিছু কাজ আছে। তা ছাড়া আমি চাচ্ছি, আগে আমাদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হোক।তারপরে আপনার সাথে ইচ্ছে মত ঘুরবো।তখন না হয়, যা জানার সব জেনে নিবো।আর মামা তো আপনার ব্যাপারে সবই জানেন।সেখানে আমার জানার কোনো প্রয়োজন নেই। তার থেকে ভালো, আমাদের বাসাতে এসে বেরিয়ে যান।ছোটো খাটো চা আড্ডা হবে।
নাহিদ-বুঝেছি, তুমি লজ্জা পাচ্ছো। ঠিক আছে।আগে দিন তারিখ ঠিক হোক।

তারপরে এক সাথে ঘুরবো।তখন কিন্তু না করতে পারবেনা।
আমি- হা হা হা, ঠিক আছে।তখন আপনার কথাই মেনে নিবো। ব্রেকফাস্ট করেছেন ?
নাহিদ-হুম করেছি একটু আগে।তুমি কখন করবে ? সকাল ত অনেক হলো। উঠে ব্রেকফাস্ট টা সেরে ফেলো।
আমি-ঠিক আছে।এখনই করতে যাবো।ভালো থাকুন ।পরে কথা হবে ।আল্লাহ হাফেজ।
নাহিদ-তুমিও ভালো থেকো। আল্লাহ হাফেজ।
এই বলে ফোনটা কেটে দিলো।উফ, বড্ড বেঁচে গেলাম।অত:পর বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হলাম। সকালের নাস্তা করেই অনলাইনে ঢুকলাম।অভির কাজ শেষ করেছে। ইনবক্সে টেক্সট করে রেখেছে।ওকে,শুভ সকাল বলে ,আমার বাকি কাজ টুকু নিয়ে বসলাম।
দুপুরের দিকেআমার টাও শেষ হলো।অভিকে ফোনে টেক্সট করে বললাম, আমারটাও শেষ হয়েছে। রাতে কথা হবে অভির উত্তর আসে।মনে হয়ে অফিসের কাজে ব্যস্ত আছে।
আমিও রুমের কাজে চলে গেলাম।দৈনন্দিন কাজ সেরে ,দুপুরের খাবার খেলাম সবার সাথে। নিশোও কোচিং থেকে ফিরেছে।ওরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে বললাম। তারপর কোচিং এর পড়া কি কি হলো? সেটা দেখানোর জন্য রুমে নিয়ে আসতে বললাম। এক ঘন্টা পরে নিশো আসে।এর মাঝে "শেষ প্রশ্ন" উপন্যাস টাও শেষ করে ফেললাম।


নিশোকে লিখতে দিয়ে আসরের নামায পড়তে গেলাম। আসার সময় চা বসিয়ে দিয়ে আসি।তারপরে ওর লিখা শেষ হলে নামায পড়তে পাঠিয়ে দেই। আসার সময় চা আনতে বলি।
সিদ্ধান্ত একটা নিয়েই ফেলেছি।অভিকেই বিয়ে করবো।ওর প্রতি যে ভালোবাসার জন্ম নিয়েছে। সেটা আমাকে অন্য কারো ঘরে শান্তিমত সংসার করতে দিবেনা।ওর মায়াময় কষ্ট মিশ্রিত মুখখানা বার বার ভেসে উঠছে। কি করলে নাহিদের মা পছন্দ করবেনা?আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।যে করেই হোক, আমাকে কিছু একটা করতে হবে। নিশো চা হাতে চলে আসে।দুইবোনে চা খাওয়া শেষ করলাম সাথে ওর ক্লাসের বাকি পড়া টুকুও।তারপরে ওরে ওর রুমে যেতে বলে দেই।

এই সময়টা অভি ফ্রি থাকে।ওরে কল দিলাম।অবশ্য ওর সাথে ফোন কলে কথা হয়না। তার টেক্সটের মাধ্যমেও বলতে ইচ্ছা করছেনা।অভি একবার রিং হতেই রিসিভ করল|

আমি- কি করতেছো ? আসলে একটু দরকার ছিলো তাই তোমাকে কল দিলাম।
অভি-আপাতত কিছুই করছিনা। বাসায় আসলাম কিছুক্ষণ আগে।
আমি- ও আচ্ছা। তাহলে বিশ্রাম নাও পরে বলবো।
অভি-না না।এখন বিশ্রামই নিচ্ছি। বলেন কি বলবেন?
আমি-তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।রাতে দশটার দিকে আমি আর নিশো নাহিদকে কল দিবে।
অভি-ঠিক আছে দিবো।কিন্তু কি বলবো ? আর কেনই বা দিবো?
আমি-আমি বলে দিচ্ছি তো।তুমি কি বলবে ?
অভি- আচ্ছা আচ্ছা বলেন।
আমি-তোমাদের কম্পানীতে নতুন একটা প্রজেক্টের কাজ আসছেনা ?
অভি-হুম, আসছে ত।কিন্তু তাতে কি হবে ?
আমি-তুমি না বেশি কথা বলো। আগে শুনবে ত কি বলি আমি ?তুমি যে সিম ব্যবহার করোনা , সেটা থেকে কল দিবে।আর বলবে, নাহিদের আপনার টা ওর এক কলিগ এর থেকে নিয়েছো। প্রজেক্টের কাজটা তোমাদের কিছু কলিগ আর নাহিদের কিছু কলিগ মিলে করতে চাও।তোমার অন্য কোনো পরিচয় দিলে দিতে পারো। ওর সাথে সেই প্রজেক্টের বেপারেই অনেকক্ষণ কথা বলবে। যতক্ষণ না তোমাকে আমি কল না দিচ্ছি। বোঝেছো ?
অভি-হুম ,বুঝলাম।কিন্তু তা তে কি হবে বলেন ত?
আমি- তা তে কি হবে সেটা এখনো জানিনা। তবে নাহিদের বেপারে বাসাতে একটা কিছু বলা ত যাবে।তোমাকে যা করতে বললাম তাই করো। আর কিছু করা লাগলে পরে বলবো।

এই বলে ফোনের লাইন টা কেটে দিলাম।উদ্দেশ্য একটাই , আম্মুর চোখে নাহিদের বেপারে একটু সন্দেহ ঢুকানো।

সাড়ে ন'টার দিকে নীচে খেতে গেলাম সবার সাথে। যাবার আগে অভিকে টেক্সট করেছিলাম , যা বলেছি মনে আছে কিনা ?
খাওয়া শেষ পর্যায়ে বললাম নাহিদ ফোন করেছিলো সকালে।ঘুরতে যেতে বলছিলো। কিন্তু আমি না করে দিয়েছিলাম। এটা শুনে আম্মু বললো , না করে দিলি ক্যানো ?গেলেই পারতি । না জানি ছেলেটা কি মনে করবে? কি আর মনে ? আমার ইচ্ছা করে নাই , তাই না করে দিছি।এতে মনে করার কি আছে? তোমার যদি খারাপ লেগে থাকে, তবে ওরে ফোন করে জেনে নাও।ও কিছু মনে করেছে কিনা ?আমার কথা শুনে আম্মু বললো, তাই ভালো।তুই এক কাজ কর নাহিদকে একবার কল দে।আব্বুও বললো, একবার উনাদের কথা বলা দরকার।আর আমারে বললো , তোর কোনোদিনই জ্ঞানবুদ্ধি হবেনা।
আমিও আর সময় নষ্ট না করে কল দিলাম।ফোন দিবার পরেই দেখি নাম্বার ব্যস্ত আছে। কয়েক বার কল দিলাম , ব্যস্ত আছে নাহিদের নাম্বার।আব্বুও একবার ট্রাই করলো। আম্মুকে বললাম হয়তো কোনো খানে দরকারে কথা বলছে।পরে কল দিবো। আম্মুও তাই বললো, ঠিক আছে পরে কল দিস। আব্বু আর নিশো চলে গেলো ।আমি থেকে গেলাম , আম্মুকে কাজে একটু সাহায্য করার জন্য।

এই ফাঁকে আম্মুকে বললাম, দেশের বাইরে থেকে পড়াশুনা করে আসছে। না জানি ছেলেটা কেমন? চাল চলন কেমন তাও ত জানিনা।যদি এখন কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে থাকে?
আম্মু বললো , কি জানি ।হতেও পারে।তোর ভালো না লাগলে বল না করে দেই।তবে তোর মামা ত তোর খারাপ চাননা। ভালো জেনেই তো প্রস্তাবটা এনেছে।হুম ,মামাত আমার খারাপ চান না।দেখো উনারা কি করেন ? বলেই রুমে চলে আসলাম।

মাঝে একবার অভিকে কল দিয়েছিলাম। যাতে ও লাইনটা কেটে দেয়। রুমে এসে অনলাইনে ঢুকলাম।দেখি অভি টেক্সট করেছে। বুঝতেছেনা ,কথা বলে লাভ টা কি হলো?নাহিদের বেপারে আম্মুর মনে একটু সন্দেহ ঢুকানো যে উদ্দেশ্য ছিলো , সেটা ওরে বলে দিলাম।তার নিজেদের কাজে মনোযোগ দিলাম।অভি বললো , মেম যা খুশি করেন।কিন্তু এই বিয়েটা করবেন না।আমি আপনার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবোনা।বোকার মত কথা বলোনা ,এখন কাজ করো।তারপরে দেখি কি করতে পারি?


সুপ্ত ভালোবাসা
পার্ট- ১০
একদিন পরে ভার্সিটিতে যাই।প্রথম ক্লাস করার পরে মাঝে এক ঘন্টা গ্যাপ। এই সময়টার বেশির ভাগ সময়ই লাইব্রেরীতে গল্পের বই পড়ি।আজকেও লাইব্রেরীতে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। এর মাঝেই ফোনে রিং বেজে উঠে।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি অভির কল।রিসিভ করার পরে শুনলাম অভি আমাদের ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আছে।আমাকে যেতে বললো, তাই ক্যান্টিনে গেলাম।(অভির জানের আমার কখন কখন ক্লাস থাকে)।

ক্যান্টিনের ভেতরে যাওয়ার পরে দেখলাম অভির সাথে একজন বোরকা পড়া ভদ্র মহিলা বসে আছেন।শুধু চোখ বের করা , তাই চিনতে পারছিলামনা।
অভির সামনে যেতেই ও বললো ,আম্মু এই হচ্ছে নিতু। অভির মুখে আম্মু ডাক শুনেই বুঝে নিলাম , ওর আম্মুকে সাথে এনেছে। তাই কাল বিলম্ব না করেই সালাম দিলাম।কেমন আছে জানতে চাইলাম।
অভির আম্মু সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললো।তারপরে কথা বলা শুরু করলেন :
কিছুদিন ধরেই অভির মাঝে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছিলাম।ঠিক মত খাচ্ছেনা ,ঠিক মত কথা বলছেনা।বাসাতে থাকলে সারাক্ষণ যে অভি আমাকে জ্বালাতো, সে একদম চুপচাপ হয়ে গেছে।শেষমেষ জানতে পারলাম তোমার কথা।
তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে , আমার ছেলেটি কোনো ভুল করেনি।ও ঠিক আমার মনের মত কাউকে খোঁজে পেয়েছে।কিন্তু সেটা আমাকে জানাতে অনেক দেরি করে ফেলেছে। কি করবো বলো ত ?তুমি তোমার বাবা -মার সাথেও কথা বলতে যেতে দিচ্ছো না।তুমি আমার ছেলেটাকে কষ্ট দিওনা।
আমি অবাক হচ্ছিলাম, কতটা ভালোবাসেন উনার ছেলেকে।যার জন্য ছেলের ভালোবাসার মানুষের কাছে অনুরোধ করতে পারে ? মায়েরা হয়তো এমনই হন। সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যেকো কাজ করেন নির্দ্বিধায়। আমি এই মুহূর্তে কি বলো বুঝে উঠতে পারছিনা। কোনো রূপ মেকি হাসি মুখে টেনে এনে বললাম , আল্লাহর উপর ভরসা রেখেছি। দেখি উনি আমাদের ভাগ্যে কি রেখেছেন? অভি আমাদের জন্য কফি আনতে গেলো।আমি অভির মা'র হাত ধরে বললাম,আমাকে এতটুকু বিশ্বাস করতে পারেন।আমি অভিকে কোনো কষ্ট দিবোনা। (কোথায় যেনো পড়েছিলাম , ভালোবাসার মানুষকে কখনোই কষ্ট দিতে নেই।আমিও সেই নীতিতে আবদ্ধ। আমার ভালোবাসার মানুষদের কোনো রূপ কষ্ট দিতে চাই না।তা তে নিজের সুখও বিসর্জন দিতে রাজি।)
অভি এতোক্ষণে কোনো কথা বলেনি।হাতঘড়ি দেখে বললো , ক্লাসের সময় হয়েছে কিনা ? আর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে।ঠিক আছে ক্লাসে যাও ,আর দেরি করতে হবে না এখন।অভির আম্মুর বললো।আমিও বিদায় জানিয়ে চলে এলাম।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।এখনো কোনো বুদ্ধি মাথাতে এলো না। কি করলে যে আমাকে অপছন্দ করবে? ছাঁইপাশ ভাবতে ভাবতে বাসাতে চলে এলাম।সন্ধ্যার দিকে হুট করে মনে হলো, সাধারণত মেয়ে দেখতে মহিলা সদস্যদের পাঠানো হয় তার একটাই কারন নাকি? মেয়ের খুঁত মহিলারাই খোঁজে বের করতে পারেন।মনে হচ্ছে নাহিদের মা,খালারাও খুঁত ধরতেই আমাকে দেখতে আসবেন।
একাট বুদ্ধি মাথাতে চলে আসছে।তবে জানিনা সেটা কত টুকু কার্যকর হবে? কার্যকর না হলে অন্য উপায় ভাবতে হবে।এখন অন্যটা ভাবার মত সময় নেই।রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসলাম। টেবিলের উপর রাখা গ্লাসটা মেঝে তে ফেলে ভেঙ্গে ফেললাম।কিছু পেতে হলে নাকি, একটু কষ্ট সহ্য করা লাগে।আমি সেই কষ্টটাই পাবার ব্যবস্থা করছি।এক সময় মেডিক্যালে পড়ার ইচ্ছা ছিলো।প্রচণ্ড সাহসিকতার জন্য ।ফল কাটার ছুরি আনলাম নীচে থেকে।পায়ের গোঁড়ালী তে সামান্য একটু কাটলাম ছুরি দিয়ে।তারপরে ব্যাণ্ডেজ করলাম কস্টিপের মত ব্যাণ্ডেজ দিয়ে। ব্যাস , কাজ মোটামোটি শেষ।
পরের দিন ঘুম ভাঙলো নিশোর ডাকে।তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। নাহিদের বাসা থেকে বারোটার দিকে দেখতে আসবে।তাই সকাল সকাল ডাকা হচ্ছে আমাকে।


সুপ্ত ভালোবাসা
পারাট -১১

নিশোকে বললাম , খাবার রুমে দিয়ে যেতে। একটু কাজ আছে। সেটা শেষ করে রেডি হবো।
নিশো জানতে চাইলো শরীর খারাপ কিনা?কিছুই হয়নি ওরে জানালাম। অবশ্য গায়ে একটু জ্বর ছিলো।ও ঠিক আছে বলে চলে গেলো। আম্মু রুমে খাবার নিয়ে এলো।টেবিলের উপর রেখে খেতে বললো। মুখের দিকে তাকিয়ে বললো , কিছু হয়েছে ? মুখটা ওই রকম শুকনো লাগছে ক্যান? আম্মুকে বললাম তুমি না অযথা চিন্তা করো। চিন্তা কি আর সাধে করি ?রাতে কিছু ভাঙ্গার শব্দ পেলাম । তোকে ডাকলাম দরজা খোলার জন্য তুই ত খুললি না।তোমার এই সমস্যা , তোমার আসার কোনো দরকার ছিলোনা , তাই তোমাকে আসতে দেইনি। ঠিক আছে, এখন খেয়ে নে। ওরা আসার আগেই তৈরি হয়ে নিস। আমাকে যেনো আর বলতে না হয়। আম্মু চলে গেলো। খাবার খেয়ে , রুম গুছানো শুরু করলাম।তারপরে তৈরী হতে চলে গেলাম। পায়ে সামান্য একটু ব্যথা করছে।সেজন্য একটু খোঁড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে। ঘন্টাখানেক পরে আম্মু হাতে একটা শাড়ি নিয়ে রুমে আসলো।শাড়ী পড়তে অভ্যস্ত না।ভালো ভাবে পড়তে পারিনা। তাই আম্মু নিজেই সুন্দর করে পড়ালো।নিশো কে দিয়ে খোঁপা বেঁধে নিলাম।আম্মু নীচে চলে গেলো, আব্বু ড্রয়িং রুমে টিভি দেখছে।কিন্তু সেটাকে দেখা বললে ভুল হবে।

ডিভির দিকে ভুল করেও মনে হয় তাকাননা।হাতের পেপার , বই কিংবা ম্যাগাজিনের দিকেই নজর থাকে। এই ফাঁকে কখনো কখনো আবার ঝিমান।
সমস্যা হলো আম্মুর এইসব একদমই পছন্দ না।যে কোনো একটা করতে বলে। হয় ঘুমাবে , না হলে টিভি দেখবে। বই পড়তে ইচ্ছা শুধু বই -ই পড়বে।কিন্তু কে শুনে কার কথা ? আব্বর সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।আমার কাছে মনে হয় আব্বুর এই তিনটা কাজ নেশাতে পরিণত হয়েছে।সাথে আম্মুর বকুনিও। হতে পারে আম্মুকে রাগিয়েই উনি খুশি হন।আম্মুর এই বকুনি টাকে পরম ভালোবাসার ছোঁয়া খোঁজে পান।কখনো কখনো আম্মুকে আর দুই একটা কথা বলে রাগিয়ে দেন আরো।নিজে মিটমিট করে হাসে।আজকেও তাই হচ্ছে নীচে।আম্মুর কথা শুনতে পাচ্ছি, আব্বুকে ঝারতেছেন।নিশোকে বললাম , আম্মুকে থামাতে। ও নীচে চলে গেলো ।আব্বু, আম্মুর এ খুনসুঁটি আমরা দু'বোনই মিটিয়ে দেই।
নিশো আবার রুমে এলো। ও জানতে চাইলো , আপু রাতে কিছু একটা ভাঙ্গার যেনো শব্দ পেয়েছিলাম তোমার রুমে।আসতে চেয়েছিলাম, পরে তুমি ধমক দিবে ভেবে আসিনি।

টেবিল থেকে গ্লাস পড়ে ভেঙ্গে গেছে।সেটা তুলে গিয়ে সামান্য একটু পা কেটে গেছে। বুঝতে পারিনি কাঁচ ছিলো। কাঁচের টুকরো পায়ে বিঁধে ছিলো। পরে বের করেছিলাম।আম্মু কে আসতে দেইনি , শুধু শুধু চিন্তা করবে। আর আম্মু ত জানিস , রক্ত দেখলেই মাথা ঘুরে পড়ে যান। যাই হোক আব্বু আম্মুকে বলিস না।(সব সময় চেষ্টা করি সমাধান নিজে খোঁজতে। সেজন্য বন্ধুরা সবাই সাইলেন্ট কিলার বলে)

একটু আগে বাসাতে মামী আর এক মামাত বোন চলে আসছে।নিশো আর ও সমবয়সী।একই সাথে পড়ে কিন্তু দুইজন দুই স্কুলে। কোচিং সেন্টার একটাই দুজনের। ওর নাম তিন্নী।এসেই আমার রুমে চলে আসলো। তিন্নী বললো, আপু তোমাকে দেখে আমি ক্রাশিত।নাহিদ ভাইয়ার মা ত চোখের পলকই ফেলতে পারবেনা। রাখ রাখ, তুই আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে আয়।এসেই এতো বড় একটা লেকচার দিলি , তাতে ত তোর গলা শুকিয়ে গেছে।
মামী এসেছে, আম্মু একা একা ত ওদের সাথে কথা বলতে পারবেনা।গল্প করার জন্য যদি কোনো নোবেল থাকতো , মামী কে সেটা দেওয়া হতো।
নীচে কি হচ্ছে উপর থেকে বোঝা যাচ্ছেনা। ওরা দু'জন মিলে নাহিদের গুণগান গাইছে। আর আমি শ্রোতার মত শুনছি। তিন্নী যখনই বললো, নাহিদ ভাইয়া আপু কে অনেক ভালোবাসতে দেখে নিস।নিশো বললো, আপু কম কিসে? ভালো না বেসে যাবে কোথায়?
ওদের কথা তে, অভির কথা মনে পড়ে গেলো।না জানি ও কত রকম চিন্তাতে ডুবে আছে।করুক চিন্তা , মাঝে মাঝে চিন্তা করতে দিতে হয়। এতে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে।অভি কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ওদের কথা শুনতেই মনোযোগ দিলাম।


part -12


মামী রুমে এসে জানালো , নাহিদের মা,কাকী,দুই খালা আর এক চাচাতো বোন আসছে।নাহিদের কোনো ফুফু নেই।থাকলে হয়তো উনিও আসতো ,মেয়ে ভাইপোর যোগ্য কিনা যাচাই করতে।
ওদের দুইজন কে সাঁজোগোজো ঠিক আছে কিনা আরেক বার দেখে নিতে। আমার বারণ করা সত্ত্বেও মুখে দুই প্রলেপ মেকাপ মেখে দিয়েছে। যেনো আমাকে না আমার সাঁজোগোজো ঠিক হয়েছে কিনা সেটাই দেখতে আসবে , ওদের দুইজনের কারবার দেখে তাই মনে হচ্ছে।

উনাদের আপ্যায়ন পর্ব শেষ হলে , আমাদের নীচে যেতে বললো আম্মু। তিনজনে নীচে গেলাম। হাঁটতে একটু কষ্ট হচ্ছে , সে সাথে একটু খোঁড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে।আম্মু বা মামীর কারো চোখে পড়েনি।কিন্তু যারা এসেছেন তাদের চোখে এড়ায় নি হয়তো।সালাম দিয়ে উনাদের সামনে বসলাম।কে জানি বললো, ফিসফিস করে বললো মেয়ের হাঁটা দেখছো কেউ ?তারপরে আর কিছু শুনলাম না।একজন নাম জানতে চাইলো , কি কি পারি ? রান্নার কাজ কি রকম পারি? আমার তেমন কিছুই বলতে হয়নি।সব মামীই বলে দিলো।একজন বললো, চুল ত খোঁপা করা।খোঁপা খোলা থাকলে ত চুলের লম্বা কতটুকু দেখতে পারতাম।মামী বললো, সমস্যা নেই খোঁপা খোলে দেই।অন্য একজন বাঁধা দিলো। উনি বললো, এখন আর ওসব চুলের লম্বা দেখে না।সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে পারলেই হাজার শুকরিয়া।এখন যা যুগ পড়েছে।অন্য একজন বললো ঠিক বলেছেন।হয়তো উনাদের দেখা শেষ, তাই রুমে যেতে বললো। আমরাও তিনজনে উপরে চলে আসলাম। ফিরার সময় মনে হচ্ছিলো , আমার দিকে তিক্ষ্ণ দৃষ্টি তাকিয়ে আছে আমার হাঁটার খুঁত ধরার জন্য।


কথা বলা শেষ করে উনারা চলে গেলেন।মামীও বিকেলে চলে যান।তিন্নী থেকে গেলো।শনিবারে কোচিং নেই ।তাই মামীও জোড় খাটালোনা।


রাতে মামার ফোন আসলো।আমাকে উনাদের পছন্দ হয়েছে।কিন্তু আমি নাকি খোঁড়িয়ে হাঁটি। সেজন্য মামা সত্যতা যাচাই এর জন্য ফোন দিছেন।খোঁড়িয়ে কেন হাঁটার কথা বললো উনারা ?আম্মুর পাশে নিশো ছিলো ,ও বললো আপুর পা কেটে গেছে।তাই একটু সমস্যা হচ্ছিলো হাঁটতে।এটা শুনে মামা উনাদের সাথে কথা বলতে চাইলেন।কিন্তু ছেলে মা বলছে, ওসব কিছুনা। হাঁটতে সমস্যা ,তাই পা কাটার কথা বলে ওমন একটা খোঁড়া আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।ছেলের বাবা বলেছিলো , উনার চোখে ধরা পড়েনি। তাই আরেক বার দেখতে চান।পা এর কাটা শুকানোর পরে।কিন্তু মামা রাজি হলো না আর।উনাদের বলে দেন উনার ভাগ্নীকে উনার ছেলের কাছে বিয়ে দিবেননা।
একটু পরে নিশো এসে খবর দিয়ে গেলো।শুনে ত আমি মহা খুশি।অভিকে জানালে , সে নাচানাচি শুরু করে দিবে।কিন্তু অভিকে সরাসারি বলবোনা।অতি সুখের আর শোকের খবর অনেকেই সহজে সহ্য করতে পারেনা। হার্ট নাকি ব্লক হয়। যে ছেলে টা তার ভালোবাসার মানুষকে হারানোর জন্য নাওয়া, খাওয়া ছেড়ে ছিলো। তার জন্য এই খবর টা অতি সুখের মতই।কিন্তু আমি চাইছিনা কোনো রিস্কি নিতে।নিজের মাঝেও খুশি সংবরণ করলাম।
অনলাইনে ঢুকে দেখি অভির অপেক্ষামান এর টেক্সট। শুরুতেই একটা কান্নার ইমো দিলাম।সাথে I am sorry, I can't do anything, plz forgive me. এটা পাঠিয়ে দিলাম।
অভির উত্তর আসে , কিছুই করতে পারেননি ? তারিখ কি ঠির হয়ে গেছে ? উত্তর কোনো উত্তর না দিয়ে বললাম , আন্টির সাথে কথা বলবো।তোমাকে পরে জানাচ্ছি।এখনই আন্টিকে ফোনটা দাও।হয়তো অভি অনেক কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু একটু কষ্ট পাইতে থাকুক।অভি আন্টির কাছে গিয়ে আমাকে কল দিলো।আন্টির কাছে সবই বললাম।যে মামা নিজেই বিয়ে দিচ্ছেন না ওইখানে।

আন্টি ও শুনে খুশি হলেন।যাক এখন একটু চিন্তা মুক্ত হলাম। কিন্তু অভির মুখ দেখে ত মনে হচ্ছে এখনই কেঁদে দিবে।কি বলেছো আমার ছেলে টাকে ?
হেসে আন্টি কে বললাম, ওরে বলেছিলাম আমি কিছুই করতে পারিনি।বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলেছে।
আপনাকে আম্মুর সাথে কথা বলতে হবে।কালকে আব্বুও বাসাতে থাকবে।যদি আপনি ফ্রি থাকেন।তাহলে আমাদের বাসাতে আসবেন।আম্মুকে বলবেন, আপনি আমাকে দেখেছেন।আপনিও আপনার ছেলের জন্য মেয়ে খোঁজতেছেন।তারপর অভির বেপারে বলবেন।আমার মনে হয় না আম্মু অভি কে অপছন্দ করবে।ঠিক আছে, কালকে তোমাদের বাসাতে যাবো।এই বলে অভির সাথে কথা বলতে বলেন।
কথাতে বোঝা যাচ্ছে, অভি এখন রেগে আছে।এটাকে রাগ বলেনা হয়তো।ভালোবাসার মানুষের উপর কেউ রাগ করেনা। যেটা করা তা হলো অভিমান।আপনি আমাকে এভাবে মিথ্যা কথা বলতে পারলেন ? জানেন কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম তখন?
অভি তোমার একসাথে তিন টা রূপ দেখতে পারলাম না।কষ্ট, রাগ,আনন্দ এই তিন রূপে তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে বলো ত?এবার কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করতেছেন।আমি সত্যি সত্যি রাগ করবো আপনার সাথে।আর আমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার ফল শোধে আসলে তুলবো।মনে রাখবেন কিন্তু। ঠিক আছে মনে রাখবো, এখন রাখছি বলে লাইনটা কেটে দেেই |

পরের দিন অভির আম্মু আসে আমাদের বাসাতে।আম্মুর সাথে পরিচিত হন।আমার সাথে উনার পরিচয় টা বলেন।উনি আমাকে ক্যান্টিনে দেখেছিলেন।তারপরে কারো কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে আমাদের বাসাতে চলে আসছেন।এই মিথ্যাটুকুও আমি শিখিয়ে দিয়ে ছিলাম।ছোট থেকেই সুন্দর করে মিথ্যা বলার স্বভাব আমার। সব সময় মিথ্যা বলিনি।খুব বেশি দরকার হলেই , সুন্দর করে বানিয়ে বলতাম।আম্মু চা নাস্তার ব্যবস্থা করে।এই ফাঁকে আব্বুকেও ডেকে আনে।
আন্টি উনাদের বাসার ঠিকানা আব্বুকে দিয়ে চা এর জন্য দাওয়াত দেন।অবশ্যই যেন সময় করে উনাদের বাসাতে যান।উনি বলেন, উনার একটাই সন্তান।তাই সব সময় চেয়েছেন এমন একটা ছেলের বউ। যে তার মেয়ের অভাব পূরণ করবে। তাদের সম্মান করবে, শ্রদ্ধা করবে, সবাইকে আপন ভাববে। কখনো কোনো অন্যায় করবে না।
এটা শুনে আম্মু বলে , আমার মেয়ে নিজেও অন্যায় করেনা। কেউ অন্যায় করুক সেটাও সে করতে দিবেনা।চোখের সামনে অন্যায় দেখলে নাকি ওর মাথা ঠিক থাকেনা।কখন যে কারে কি বলে বসে? আম্মুর এই একটা স্বভাব।সব সময় দেখি আসছি।আশেপাশের আন্টিরা কত সুন্দর নিজের মেয়েদের গুণগান করেন।আহা ! শুনলেই মন টা ভরে যায়।যা না করে সেটাও উনারা কত সুন্দর করে গুছিয়ে তুলে ধরেন।মেয়ের কোনো যেন অন্য কারো চোখে না পড়ে।সে বেপারে যুদ্ধের ময়দানে সৈনিক দের থেকেও বেশি সচেতন।বাজের মত তীক্ষ্ণ দৃষ্টির মত নজর রাখেন।কেউ যেন মেয়ের কোনো দোষ বের না করে হাটে হাঁড়ি না ভাঙ্গে।
কিন্তু আম্মুকে দেখেছি তার বিপরীত।যত টুকু গুণ গাইবে ,তার থেকেও বেশি দোষ টাই বলবে।আম্মুকে আব্বু থামিয়ে দিয়ে উনাদের বাসাতে যাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।আন্টি চলে যান,মুখে রাষ্ট্র জয়ের হাসি নিয়ে।

আন্টি জানতে চেয়েছিলো , আমি কোথায় আছি? আম্মু রুমেই আছি বলে ডাকতে চেয়েছিলো।থাক , ওকে আর বিরক্ত করতে হবেনা।আগে আপনারা আমার বাসাতে যাবেন , আমার ছেলেকে দেখবেন।ওর বেপারে খোঁজ নিবেন , তারপর যদি আসতে বলেন তখন আমরা এসে দেখবো।

আন্টি চলে যাবার পরে,আম্মুর চিল্লাচিল্লি শুনলাম।আম্মু বেঁকে বসছে , কিছুতেই দেখতে যাবেনা ওদের বাসায়।কে না কে ? হুট করে এসে যেতে বললো।তার উপর আবার এক বাপের এক ছেলে।আম্মুর আবার এক বাপের এক ছেলে বা মেয়ে তে এলার্জি আছে।আম্মুর মতে, এক বাপের এক সন্তানরা নাকি অভদ্র হয়।বখে যাওয়া বেশির ভাগ পোলাপাইনই নাকি এক বাপের এক সন্তান।কোনো সন্তান না থাকায় তারা নাকি অতি আদরে মাথায় ওঠা বেয়াদব।
হইছে থামাও ত তোমার লেকচার।উনি আসছেন, ভদ্রতার খাতিরে উনার বাসাতে গেলেই আমরা মেয়ে বিয়ে দিবো নাকি ?দেখবো , জানবো , আশেপাশে লোকদের থেকে খোঁজ নিবো। পছন্দ হলে , তারপরেই চিন্তা করবো। আর সবাই কি এক রকম ?যিনি আসছেন উনাকে দেখেও ত বেশ ভদ্র মনে হলো।
হইছে তোমাকে আর অন্য মহিলার সুনাম করতে হবেনা।যা ভালো মনে করো , তাই করো।আমি এসবের মধ্যে নাই ,এটা বলে আম্মু নিজের কাজে চলে গেলো।


রাতে অনলাইনে গেলাম,অভি ধন্যবাদ দিয়েছে।বোঝা যাচ্ছে ওর ভেতর সুখের জোয়ার আসছে।
জানতে চাইলাম কি খবর ?মিনিট পাঁচেক পরে উত্তর আসে ভালো ।সাথে অনুরোধ করে বলে, কালকে যেনো ক্লাস শেষ করে বিকেলে হাতিরঝিল যাই।ক্লাস শেষ হবে তিনটায়। ঠিক আছে বলে অনলাইন থেকে চলে আসলাম।কিছু কাজ জমা আছে, সেগুলো করতে হবে।
পরের দিন ক্লাস শেষ করে রুম থেকে বের হলাম। বের হতেই ফোনের কম্পন শুরু।হাতে নিয়ে দেখি অভির কল।রিসিভ করলাম :-

আমি-হ্যালো !
অভি- ক্লাস কি শেষ হয়েছে?
আমি- হুম, মাত্র শেষ হলো।রুম থেকে বের হলাম তার মাঝেই তোমার কল।বলো কি বলবে ?
অভি-তেমন কিছুই বলবো না।হাতিরঝিল আসেন সাবধানে।তখনই বলবো নে যা বলার।
আমি-ঠিক আছে আসছি।
অভি-ওকে।
তারপরে ও লাইন কেটে দিলো।

বাসা থেকে বলে আসছিলাম, ফিরতে হয়তো একটু দেরি আছে।একটু কাজ আছে।
সাড়ে চারটা বাজে হাতিরঝিলে আসলাম।ভেতরে গিয়ে অভিকে কল দিলাম। অভি দুই মিনিট অপেক্ষা করতে বলে। আমি গেইট থেকে একটু দূরের বেঞ্চিতে বসলাম।


ব্যাগ থেকে ফোন বের করছিলাম।এমন সময় অভি পিছন থেকে এসে আমার চোখ ধরে।আমি ত পুরাই চমকে উঠি।যত টা চমকে উঠেছিলাম , তার থেকেও বেশি ভয়ে পেয়ে যাই।হুট করে কে আবার এসে আমার চোখ ধরলো? বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যাই।অভির হাসির শব্দ শুনতে পাই।আমি হাত দিয়ে ওর হাত ছুঁয়ে বোঝার চেষ্টা করি আসলে অভি কিনা ?ফাজিল টা হেসে বলছে ,কি মেম ভয় পেলেন নাকি?এটা কেমন ভদ্রতা হলো বলো ত?এমন একটা অপরিচিত জায়গাতে কেউ চোখ ধরে? ভয় পাবো না মানে ?এমন করলে কেন ?
ও বলে প্রতিশোধ নিলাম। সেদিন রাতের কথা মনে আছে মেম?আপনি আমাকে মিথ্যা বলে কতটা ভয় পাইয়ে দিয়ে ছিলেন? তারই কিঞ্চিত্‍ পরিমাণ এখন শোধ নিলাম।ঠিক আছে আমিও দেখে নিবো।পরের বার দেখো না আমি কি করি তোমার?মনে রেখো এক মাঘে শীত যায় না।এই ভয় দেখানোর জন্যই আমাকে ডেকেছো নাকি?যাও তোমার সাথে আমার আর কথা নাই।চোখে থেকে হাত সরিয়ে অভি বলেয আরেহ্ মেম, রাগ করতেছে দেখি?না না, কিছু বলার জন্য ডেকেছি।তারপর পিছন থেকে আমার কানের কাছে বলতে থাকে :-

Hello dear,
Can u listen to me?
Plz close ur eyes
And thought urself ,
beside a ocean.
Try to find the gravity,
And try to see the other side of the Ocean.
I know u can't find gravity,
u can't see the other side.
Plz keep it on ur mind,
my love just like a Ocean.
But it has no gravity , no bounds.

Plz trust me and catch my hand,
I love u many many and many more.
If u love me a little bit
I'll be happy , no complain to u.
Tell me, u stay beside me
As long as I or u alive in the earth.
Belief me, I am a king without u
just like a king without state.
Plz love me as u can,
but I love u as long as I can.
এই বলে অভি আমার সামনে এসে একগুচ্ছ গোলাপফুল এগিয়ে দিলো।ok, I belief and trust u. বলে ফুলগুলো নিলাম।কিন্তু তুমি কবি হলে কবে?কথা গুলো শুনে ত তুমিই লিখেছো। Am I right?
হ্যা,মেম। আপনি ঠিকই বলেছেন।

আসলে আপনাকে ভালোবাসি কথা টা কখনোই ত বলতে পারিনি।তাই একটু অন্য ভাবে বলতে চেয়েছিলাম।
আরেহ্ বাহ! প্রেমে পড়লে নাকি মানুষ কবি হয়।এ যে দেখি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ চোখের সামনে।ভালো ভালো, একজন ইঞ্জিনিয়ার এর পাশে কবি নাম টাও বসিয়ে দাও।তবে বলার সময় মনে হলো, তোমাকে পুরস্কার দেওয়া উচিত আমার।যেমন লিখেছো , তার থেকেও ভালোভাবে পাঠ করেছো।মুগ্ধ হলাম।
অভি আমাকে থামিয়ে বললো, এতো পাম দিয়েন না ত।পরে ফুলে ফেটে যাবো।আর ফেটে গেলে বিয়ে করবো কেমনে ?
আহারে বেচারা ! বিয়ের জন্য একেবারে অস্থির হয়ে গেছে বলেই হেসে উঠলাম।মজা নিয়েন না ত আর।ওকে নিলাম না আর মজা।ত আজ অবধি দেখিনি ত যাকে ভালোবাসা , বিয়ে করবে তাকে আপনি করে কোনো ছেলেকে বলতে শুনি নি।আপনি শুনেন নাই এখন ভালো করে শুনেন।আমি আপনাকে আপনি করেই বলবো।আপনার একটা ট্রিট পাওনা আছে।চলেন চলেন সাথে একটা সারপ্রাইজ ও আছে।
part 14
কোথায় যাবো ?আর কি সারপ্রাইজ আছে ?অভি বললো, আরে চলেন ত।অভি আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো।ভেতরে ঢুকে ত পুরাই অবাক।ওর সব বন্ধু আর কলিগদেরও আসতে বলেছে।সবাইকে দেখে ওর কাছে জানতে চাইলাম বেপার টা কি? এতো আয়োজন ক্যান?হা হা করে হেসে উঠে।বলে, এই যে আপনাকে যে পাশে পেয়েছি।তার জন্য সবাই ধরেছে সিলেব্রেট যেন করি।অভি সবাই কে ডেকে বললো,এই হলো আমার স্বপ্নকুমারী নিতু।সবাই এসে কংগ্রাচুইলেশন জানাচ্ছে, আমাদের ভালোবাসার দীর্ঘস্থায়ীত্ব কামনা করছে।আর অভি মিট মিট করে হাসছে।ওর হাসিটার জন্য আমি সব করতে পারি।পাশে থাকবো যতদিন আছে শ্বাস।আমি ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি, সেটা ও বুঝতে পেরে যায়।মেম, আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে কি ভাবছেন?রাগ করলেন নাকি? না জানিয়ে সবাই আমন্ত্রণ করার জন্য? না না, রাগ করিনি।তাহলে কি ভাবছেন ?ও কিছু না।আচ্ছা বাদ দেন , চলেন বসি।এই ফাঁকে বাসাতে কল দিলাম।আম্মুকে বললাম, বন্ধুদের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে আছি।ফিরতে একটু দেরি হবে।চিন্তা যেন না করে। সবার সাথে কথা বলে আর খাওয়া দাওয়া করে বাসাতে আসলাম।অবশ্য অভি সাভার পর্যন্ত রেখে গেছে।সন্ধ্যা হয়ে গেছে , তাই একা আসতে দিতে চায় নি ।অভি যাওয়ার আগে ধন্যবাদ দিলো সময় দেওয়ার জন্য।
আমি হাসি দিয়ে চলে আসলাম।বাসায় ঢুকার পরে ফ্রেস হলাম।আম্মু রুমে এসে জানতে চাইলো দেরি হলো কেন?আম্মুকে বললাম, বিয়ে ভেঙ্গে গেছে।সেজন্য ফ্রেন্ডরা ধরেছে ওদের কে খাওয়াতে।ভেবেছিলাম ক্যাম্পাসেই চা খাইয়ে ছেড়ে দিবো।কিন্তু ওরা রেস্টুরেন্টে ধরে নিয়ে গেছে।আম্মু আমার ফ্রেন্ডদের বেপারে সবই জানে।কেউ খাওয়া আবদার করলে। সেটা তারা আদায় করেই ছাড়বে।ব্যাগ থেকে নিজেরাই টাকা বের করে নিবে, বারণ করলেও শুনবে না।এতোটা ভদ্র আর হ্রামী ওরা। কিন্তু ওরা ট্রিট চেয়েছে বিয়ে ঠিক হলেই যেন দেই।আবারো গুছানো মিথ্যার বলি আওড়ালাম।পরে একদিন সত্য বলে দিবো।এখন বলে দিলে বিপরীত হলেও হতে পারে।তাই গোপনই রেখে দিলাম মিথ্যার চাঁদরে।
আম্মু চলে গেলো।আমিও নিশোকে পড়ানোর জন্য রুমে ডাকলাম।ও চলে আসলো বই হাতে।আমাকে বললো, আপু মঙ্গলবারে নাকি একজনকে দেখতে যাবে ।তুমি বলে দাও না , এখন বিয়ে করবে না। ধুর, আমার কথা শুনবে নাকি? দেখতে যাবে যাক।গেলেই ত আর বিয়ে হবে না।এখন পড়ত , ওসব কথা বলে আর মন করিস না।অভি কে একটা টেক্সট করে খবর টা জানিয়ে দিলাম।ও যে খুশিই হবে তা আর বলতে হচ্ছে না।
রাতে খাবার টেবিলে কি বিষয়ে আব্বু, আম্মু কথা বলছিলো।আমরা দু'বোন যাওয়ার পরে সে টপিক অফ রাখে।হয়তো অভির বেপারেই কথা বলছিলো।আম্মু প্লেটে খাবার দিতে দিতে বললো, কালকে তোর খালামণি বাসাতে আসবে।খালামণি বাসাতে আসা মানে বিশাল কিছু।উনারে সিকিউরিটির পোস্টে চাকরি দেওয়ার ছিলো।তা না করে , কেনো যে নানু সংসারের পোস্টে চাকরি দিছেন।সেটা উনিই ভালো জানেন।আম্মুর কাছে থেকে শুনেছি , খালামণি নাকি যেই রকম রাগী তেমনই মারকুটে স্বভাবের।সামান্য ভুল হলেই মারধোর করতেন আম্মু আর মামাদের।খালামণি সবার বড় ,সেই অনুসারে সবাই সম্মান করে।তাকে যে সবাই ভয় পান তা আর বলতে হয় না কারো।উনার দুই ছেলে এক মেয়ে।সবাই আমার বড় কিন্তু খালামণিকে জমের মত ভয় পান।তাদের সবাই এখন বিবাহিত।আম্মুকে বললাম, হুট করে খালামণি আসবে কেনো ? কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?খালামণি বাসাতে আসলে আমাদের দুই বোনের করুণ অবস্থা হয়।বারোটা বাজলেই ঘুমাতে হবে।আযানের পরেই উঠতে হবে।রুমের ভেতর কখনোনই জোড়ে কথা বলা যাবেনা।এমন কি হাসলেও উনার চোখ রাঙানী।খালামণি যা বলবে তাই শুনতে হবে, করতে হবে।আম্মুকে ফিসফিস করে যদি বলি ওই কাজ টা করতে পারবোনা।আম্মুরও চোখেমুখে অসহায়ত্বের ছাপ। আমাদের বলেন, খালামণি বলছে যখন করে নে।মুরুব্বি মানুষ মনে কষ্ট পাবে।
তখন মুখ গোমড়া করে যতটুকু পারি, করে দেই।তবে খালামণি এমনি তে আমাদের অনেক ভালোবাসেন।সেটা বুঝতে পারি।মাথায় বিলি কেটে তেল দিয়ে দেন।কখনো দেখা যায় যত্ন সহকারে মাথা শেম্পু করে দিচ্ছেন।আর আম্মুকে বকবেন।মেয়ে দুইটারে রাস্তার পোলাপাইন বানাই রাখছে।কোনো যত্ন করে না।সংসারের কাজ করলে ছেলেমেয়ের যত্ন নিবি না ?রুমের ভেতর অগোছালো কিছু দেখলেই আমাদের ঝারবেন , আর গুছিয়ে রাখবেন।খালামণি এতো পরিশ্রম যে কিভাবে করেন আল্লাহই ভালো জানে।বাড়ির বড় মেয়েদের নাকি সব কাজ জানা লাগে? সব কিছু সামলানোর ক্ষমতা থাকা লাগে।সেটা আমাদের খালামণিকে দেখলে বুঝতে পারি ,উনার মাঝে স্রষ্টা কোনো খুঁত রাখেননি।সবই দিয়েছেন।সবার সাথে মিশতে পারারও অপার ক্ষমতা আছে।তবুও আমরা ভয় পাই , উনার রাগী মুড টার জন্য।
খালামণির আসার কথা শুনে ত ভয়ে সে রাতে আর খাওয়া হলো না ঠিক মত।নিশোকে বললাম ,এখনই রুম ঠিক করে রাখ।কোনো ময়লা আবর্জনার যেন না থাকে।আমিও চলে গেলাম আমার রুমে ।রুম গোছানো আছে, তবুও আবার ঠিক করলাম।খালামণি যেনো কোনো দোষ খোঁজে না পান।
তারপরে অনলাইনে ঢুকে টাইমলাইন পোস্ট দিলাম:
"বাসায় ১২৮০নং বিপদ সংকেতের সাইরেন বেজে গেলো।আগামীকাল বিপদ সংকেতের জননীর বাসায় আগমণ ঘটবে।জীবনটা যেন ডাঙাতে রাখা মত্‍সের মত অবস্থা হয়ে যাবে।"
সবাই কারন জানতে চাইছে ,উত্তর দিলাম কারন টা খুব একটা না বিপদে পড়তে যাচ্ছি।অভি ইনবক্সে টেক্সট পাঠালো ।মেম, আপনার না কথা না মাঝে মাঝে আগামাথা কিছুই বুঝিনা।কি পোস্ট দিলেন বলেন ত ? কিসের বিপদ ,কে আসবে বাসাতে ?
বললাম, বাসাতে খালামণি আসবে।এর বেশি তোমাকে এখন জানতে হবে না।যখন জামাই হয়ে বাসাতে ঢুকবে।তখন বুঝতে পারবে কিসের বিপদ?
অভি বললো, ঠিক আছে তখন সবই বুঝে নিবো।এখন আর আপনাকে বলতে হবে না। তো মঙ্গলবারে কি সত্যিই আসবেন আপনার বাসার লোক?
যেতে পারে ,আমি ত তাই শুনলাম।এরপর নিজেদের কাজে মনোযোগ দিলাম।
part 15

পরেরদিন ভার্সিটির ক্লাস করে এসে দেখি খালামণি হাজির।ছোট বোন টা খালামণির পাশে কাঁচুমাচু করে বসে আছে।যেন জোড় করে কেউ তেতো ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে।মুখের ওই অবস্থা দেখে মায়া হচ্ছে।কাছে গিয়েই সালাম দিলাম।ছোট থেকেই খালামণিকে জড়িয়ে ধরতাম আসার সাথেই।এখন ত বড় হয়ে গেছি , তাই পাশে গিয়ে বসলাম।খালামণি ত থুতনীতে হাত দিয়ে দেখেই আম্মুরে বকা শুরু করছেন।মেয়ে দুইটারে কি খাওয়াস না ঠিক মত? নাকি বাসাতে খাবার দাবারের অভাব ?মুখগুলোর দিকে তাকানো যায় না।শুকিয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গেছে।আমাকে বললো, তুই রুমে যা ত মা।আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছি।ঠিক আছে খালামণি বলে রুমে চলে গেলাম।এখন আমার করুণ অবস্থা দেখে নিশো মুচকি মুচকি হাসতেছে।তারমানে ওরেও একই থেরাপী এপ্লাই করেছে খালামণি। মনে মনে বললাম , ওরে আল্লাহ আমারে বাঁচাও।না হলে আমার পেট টারে ব্যাঙের মত বানিয়ে দাও।খালামণি তার যতক্ষণ ইচ্ছা হবে ,ততক্ষণই আমাদের খাবার খেতে হবে।প্লেটে যা তুলে দিবেন সবই বিনাবাক্যে খেতে হবে ।একটু এদিন ওদিন হলেই বাঘিনীর মত হুংকার ছাড়েন।আমরা সেই হুংকার শুনে ভীত সন্ত্রস্ত হরিণশাবকের মত ভয়ে চুপসে যায়।
ছোট সময় একবার খালামণির এমন খাবারের উপর জুলুমের হাত থেকে বাঁচার জন্য খাটের নীচে লুকিয়ে ছিলাম।কিন্তু এখন যে কোথায় লুকাবো তা ভেবে কুল পাচ্ছিনা।একটু পরে খালামণি খাবার হাতে নিয়ে রুমে আসলো।খাবার দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো।এই গুলো সব আমাকে খেতে হবে ?পিছনে দেখি আমার স্নেহময়ী মাতাও এসেছেন।আম্মুর দিকে করুণ নয়নে তাকালাম। আম্মু বুঝতে পেরে বললো, আস্তে আস্তে খেতে।খালামণিকে বললো, আপা চলো তোমার সাথে জরুরি কথা ছিলো।খালামণি যাবার আগে বললো, ঠিক মত খেয়ে নিতে।আমি মাথা নেড়ে যসায় দিলাম।
একটু পরে নিশো আসলো।আপু তুমি বেঁচে গেছো খালামণি সামনে নেই।আমাকে খালামণি পাশে বসিয়ে রেখে খেতে বলছে।খুব কষ্ট করে খেয়েছি।আপু, আমাদের না ভাগ্য ভালো।আম্মু খালামণির মত একটু হয়নি।না হলে যে আমাদের দুইবোনের কি অবস্থা? সেটা আল্লাহই ভালো জানে।
আহা! মন খারাপ করিস না।খালামণি একটু বেশি খান।উনার ধারণা বেশি খেলে মোটা হবো আমরা।তাই এমন করেন আমাদের সাথে।আম্মু ওই রকম হলে আমাদের দুইবোনকে অতি মোটার জন্য নোবেল দিতো।ও শুনে হেসে উঠলো।আপু তুমি না সব কিছুতেই মজা করতে পারো।তুমি পারো বটে।আমি পরিমাণ মত খেয়ে কিচেনে রেখে আসলাম।ভাগ্যিস খালামণির চোখে ধরা পড়িনি।আম্মুর রুমে আছে , কোনো দরকারি কথা বলছে।

সন্ধ্যার দিকে মামী চলে আসলো বাসাতে।সাথে তিন্নীও আসছে একদম স্কুলের ব্যাগসহ।বোঝা যাচ্ছে ও এখান থেকেই স্কুল করবে।থাকবে বেশ কিছুদিন।নিশো ত ওকে পেয়ে খুশিতে গদগদ।রাতে সাবই মিলে খাবার খেলাম।তিনজনে মিলে আমার রুমে বসে আছি।এক রকম আড্ডা দিবার জন্যই।তিন্নী বললো,আপু মন খারাপ করেছো? নাহিদ ভাইয়া কিন্তু তোমাকে অনেক পছন্দ করেছিলো।উনার মা কেনো যে এমন করলো ?নিশো বললো, রাখ তোর নাহিদ ভাইয়া।আমার এতো ভালো আপুটারে ওরা প্রতিবন্ধী বানাইছিলো।এখন যার কথা চলতেছে উনার ভালো হলেই হলো।তিন্নী বললো, নিশো ছেলে দেখেছে কিনা ? ওর বেপারে জানে কিনা কিছু?বললাম, এখন না জানলেও চলবে, তোরা কালকেই সব জানতে পারবি।আম্মু কিংবা মামী দুইজনের একজন বলবেই। নিশ্চিত থাক এখন ।তোরা কি যাবি উনাদের সাথে ?নিশো বললো, আমরা যেতে চাই।কিন্তু আমাদের ত সাথে নিবে না।ঠিক আছে মন খারাপ করিস না।আগে দেখে আসুক।আমাদের বাসাতে আসলেই তোরা দেখে নিস।কিন্তু আপু ছেলেটাকে দেখাতে ইচ্ছা করতেছে।সবাই দেখবে আর আমরা দেখবো না ?তিন্নী বললো।আরেহ বাবা দেখবি তো ,পরে যখন আসবে তখন ত দেখার সুযোগ পাবিই।পছন্দ হলে ত আরো বেশি দেখতে পাবি।

পার্ট -১৬
তিন্নী বললো , সে হবে না আমরা দুইজন যাবোই।প্লিজ আপু একটা ব্যবস্থা করে দাও।ঠিক আছে , তোরা দুইজন মিলে খালামণিকে বলিস।উনি রাজি হলে তোরা যেতে পারবি।কিন্তু ফুফুকে কি বলবো ?
কিছুক্ষণ ভাবার পরে বললাম, খালামণিকে বলবি সবাই ত যাচ্ছে কথা বলাৰ জন্য।কিন্তু কথা বলার ফাঁকে ত চারপাশ ঘুরে দেখার জন্য লোক লাগতে পারে। সে কাজ ত বড়রা করতে পারবেনা কথা বলার ফাঁকে।তাই তোদের দুইজনকে সাথে নিলে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখতে পারবি। এই ফাঁকে ছেলেও দেখা হলো।
নিশো বললো, আপু তোমার মাথাতে এতো বুদ্ধি কই রাখো ?তিন্নী খুশিতে জড়িয়ে ধরলো।খালামণিকে রাজি করানোর জন্য চলে গেলো।
ওদের দুইজনের আবদার খালামণি ফেলেনি।প্রথমে অবশ্য আম্মু আর মামী বারণ করছিলো।
পরের দিন বিকেলে মামী, খালামণি, আব্বু, মামা আর ওরা দুইজন অভিদের বাসাতে গেলো।আব্বু আগের দিন নাকি অভিদের এলাকা থেকে খোঁজ খবর এনেছে।তাদের পরিবারের মানুষ কেমন ?অভি ছেলে হিসেবে কেমন ?সব জেনেই বাসাতে দেখতে যাচ্ছে।
আমি ক্লাস করে আসার পরে শুনলাম সবাই চলে গেছে।বাসাতে শুধু আম্মু একা আছে।নিজের রুমে চলে গেলাম।
ফ্রেস হয়ে এসে দেখি ফোনে রিং হচ্ছে। এমন সময় আবার কে ফোন দিলো ?বলেই ফোন চেক করে দেখি অভির কল।
ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই অভি কথা বলা শুরু করেছে :-
অভি - মেম, কই ছিলেন এতোক্ষণ ?
আমি- ছিলাম ত রুমের আশেপাশেই।তো এই সময় কি মনে করে ফোন দিলে ?হবো শালীদের দেখে ভয় পাচ্ছো নাকি?
অভি- আপনার বোনরা বাসাতে এসে গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছে? ভয় ত পাবোই ? না জানি কোন দোষ ধরে বসে।সেই অপরাধে বিয়ের মঞ্চ থেকে ফাঁসির কাষ্ঠে যদি ঝোলায় ?
আমি- তো ওদের সামনে কি গিয়েছো ? নাকি ভিতু রামের মত রুমে বসে আছো ?
অভি- এখনো যাইনি কারো সামনে।এখন যাবো ,আম্মুর ডাক পেলেই।
আমি- যাও যাও , একটু মেকাপ ও করে নিও।পছন্দ না হলে কিন্তু মেয়ে দিবেনা।
অভি- আগে বলবেন না? কিনে আনতাম দোকান থেকে।আমার দূর্দশাতে আপনার ত মজা করা স্বভাব সেটা আমি ভালো করেই জানি। কই থেকে বলবেন , কে কেমন ?
আমি- ধ্যাত, এতো কিছু না ভেবে। মাইন্ড ফ্রেস করো , তারপরে হাসি মুখে সবার সামনে যাও।এখন রাখলাম ।যারা গেছেন , তারা অবশ্যই পছন্দ করবে।
অভি- ঠিক আছে ,পরেই কথা হবে।
অভি লাইন কেটে দিলো।আমি খেতে নীচে চলে গেলাম।গিয়ে দেখি আম্মু টিভি দেখতেছে।
আম্মুর কাছে গেলাম। আম্মু বললো ,চল তোর খাবার দিয়ে আসি।বললাম, তুমি টিভি দেখো আমিই খেয়ে আসি।আম্মু বললো, ঠিক যা, টেবিলেই সব খাবার রাখা আছে।
তারপরে খেয়ে এসে আম্মুর পাশে বসলাম।কোনো কারনে আম্মুকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। তাই জানতে চাইলাম:
আমি- তোমাকে কেমন জানি মনমরা দেখাচ্ছে।শরীর খারাপ নাকি ?কি হয়েছে ?
আম্মু- আমার কিছুই হয়নি। ভাবতেছি একটা বিষয়ে।
আমি- কি ভাবতেছো ? বলে ফেলো দেখি আমি ভেবে কিছু পাই কিনা?
আম্মু- আজকে তোর জন্য ছেলে দেখতে গেছে । বাবা -মার একমাত্র সন্তান শুনলাম। ওই টাইপের ছেলেগুলো আমার পছন্দ না।তোকে যদি সুখী না করতে পারে?তোর আব্বুর,খালা ,মামার যদি পছন্দ হয় ?তাহলে ত সবই ফাইনাল করে ফেলবে।আর ছেলেকে যদি তোর ভালো না লাগে? খুব চিন্তা হচ্ছে তোর জন্য।
আমি- রাখো তোমার আজাইরা চিন্তা।সবাই ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিবে।তোমাদের পছন্দ হলেই আমারও পছন্দ হবে। তার আগে বলো ত, আমার যদি কোনো ছেলে পছন্দ হয় ? তুমি কি তাকে অপছন্দ করবে? নাকি খালামণির মত করবে ?
আম্মু-আমারে দেখে কি তোর খালামণির মত মনে হয়?তোর পছন্দ আছে কিনা সেটা আমাকে বলে দেখতে পারিস।সবাইক মেনেজ আমি করবো।
আমি-না, তুমি খালামণির মত না।তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের মত।
আম্মু- হইছে থাক আর বলা লাগবেনা।সত্যি করে বল তো, তোর কি কাউকে পছন্দ? তা না হলে এমন কথা বললি ক্যান?
আমি-ওই রকম কিছুনা।বাদ দাও , তোমার যা বলবে তাই হবে।
আম্মু-আরেহ, বলবি ত আগে আমাকে।পছন্দের কেউ থাকলে , অন্য কারো ঘরে শান্তিমত সংসার করতে পারবিনা।আমি চাই না তোরা নিজের ভেতর কষ্ট চেপে রাখ।
আমি- (কোনো ভণিতা না করে) রাগ করবে না ত?আজকে সবাই যাকে দেখতে গেছে।ওকে আমার ভালো লাগে।কিন্তু সে কথা তোমাক বলার মত সাহস পাইনি।আর তোমাকে বলবো বলবো করেও সে ভাবে সময় পাইনি।অভিকে আমি ভালো করেই চিনি।তুমি দেখলে তোমারও পছন্দ হবে।আমাকে নিয়ে চিন্তার কোনো কারন নেই।তবে আমি চাই তোমরা সব কিছু দেখেশুনে মতামত দাও।
আম্মু- ও বুঝতে পারছি এখন।নাহিদের সাথে কথা হবার পরে থেকেই তুই কেনো এতো চিন্তাতে ছিলি? আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ?তাহলে আমাকে আগে বললি না ক্যান? আমি ত তোদের আগেই বলছি, কাউকে পছন্দ হলে আমাকে বলতে।
আমি-তার মানে তুমি এখন চিন্তামুক্ত।তোমার মেয়ে অপরিচিত কারে ঘরে যাচ্ছে না।
বাসাতে আর কাউকে বলো না।সবাই যেভাবে চাচ্ছে , সেই ভাবেই করুক।
আম্মু-সে না হয় বুঝলাম।কিন্তু কিভাবে চিনিস ওকে? কখনো ত দেখলাম না তোকে কারো সাথে তেমন কথা বলতে।কতদিন ধরে পরিচয় তোদের?
আমি-পরিচয় ত অনেক দিনের তিন বছরের মত হবে।কথা বলতে কেমনে দেখবে ?আমি কি দরকার ছাড়া কারো সাথে কথা বলি? আমি যেমন দরকার না হলে কারো সাথে কথা বলিনা , তেমন অভিও। ও একটা ক্যাম্পের ট্রেইনার ছিলো।সেখান থেকেই ওকে চিনি।

আম্মু- ঠিক আছে , ওরা আসুক দেখি কে কি বলে? তুই রুমে গিয়ে রেস্ট নে।আমার হাতের কিছু কাজ আছে করতে হবে।
রুমে চলে আসলাম , যাক এখন কিছুটা হালকে লাগতেছে নিজেকে।জানতাম, আম্মু আমাকেই সাপোর্ট করবে।ভালোবাসাকে আম্মু যথেষ্ট সম্মান করে।আম্মুর কাছে থেকেই আমারও শিখা ,ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা করে।আম্মু বলেন, তুই যদি কারো ভালোবাসাকে অসম্মান না করিস।তবে অন্য কেউ তোর ভালোবাসাকে অসম্মান করবেনা।হতে পারে উনার ধারনা মিথ্যা।তবে আমি সে কথায় বিশ্বাস করি।কেউ আমার ভালোবাসাকে অসম্মান করলে ত আমার কিছুই করার নেই।সেটা ভাগ্যের লিখন ধরে নিতে হবে। বারান্দায় বসে ভাবছি আর আমার পছন্দের গান শুনতেছি।

part- 17

এমন সময় দুই বিচ্চুর রুমে প্রবেশ।
দুইজনে একসাথে আমাকে ডাকছে। কি রে এভাবে চেঁচাচ্ছিস ক্যান ? কি হইছে তোদের ? আসছিস ভালো কথা একজনের কি ডাকা যায় না? রুম টা একেবারে মাথায় তুলে ফেললি?
তিন্নী বললো, আরে থামাও তোমার লেকচার। আমি কিন্তু পুরো ফ্ল্যাট ছেলেকে দেখে।
আমি বললাম, ওমা! তাই নাকি ?তাহলে এক কাজ করি মামা - মামীকে ম্যানেজ করে তোরই বিয়ের ব্যবস্থ্যা করে দেই।
ও কিছুটা লজ্জা পেলো। ধুরর কি যে বলো না তুমি? আমার মত বাচ্চা মেয়ের কি বিয়ের বয়স হয়েছে? শুধু বিয়ের খাওয়ার বয়স হইছে নিশো বললো।
তিন্নী কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, তোমরা দুইবোনে আমাকে পঁচাচ্ছো ক্যান? এখন কিন্তু কেঁদেই ফেলবো।
আরে থাম থাম, তোর কাঁদতে হবে না। কি রকম দেখলি তোরা? সব পছন্দ হলো তোদের ?সবাই কি বলেছে?
নিশো বললো আব্বু, মামা, খালামণিকে দেখে মনে হলো পছন্দ হইছে। শুনে মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বললাম।
আব্বু কি বলেছে জানতে চাইলাম।
নিশো বললো, আব্বু উনাদের দুইদিন পরে আসতে বলেছে।
ঠিক আছে, তোরা একটু ফ্রেস হয়ে রেস্ট নে।
একটু পরে রুমে খালামণি আর মামী আসলো। খালামণি মামীকে বললো , দেখো ত কোনো কিছু গুছানো লাগবে কিনা ?
খালামণি কে বললাম, রুম গুছানোই ত আছে।আবার গুছাতে হবে কেন ?
উনি বললেন,সে তোকে জানতে হবে না।
মামী বললো, না না ওরে বলা দরকার।আসলে কালকে তোমাকে দেখতে আসবে। উনারা বললো, কালকেই নাকি রিং পড়াবেন।তারপরে একটা শুভদিন দেখে দিন ঠিক করবেন।
আমি বললাম, আমাকে ত আগে বললেন না।কারা আসবে ? আমি ত দেখলামই না ।এসই রিং পড়াবেন এ কেমন কথা?
খালামণি বললো, অত শত তোকে জানতে হবে না।ছেলের পরিবার আমার পছন্দ হয়েছে।ছেলেও মাশাল্লাহ ভালোই। তুই কালকে আর ক্লাস করতে যাস না।বাসাতেই থাকতে হবে তোকে।তারপরে মামীকে সাথে করে নিয়ে চলে গেলেন ।
কালকে দেখতে আসবে , আর আমার ক্লাস করা অফ। দেখতে ত আসবে বিকেলে।ক্লাস করে বাসাতে চলে আসতে পারবো তাদের আসার আগেই। ক্লাস মিস করার ত কোনো দরকারই পড়েনা।
দিলাম অভি কে কল।দুইবা রিং হবার পরে রিসিভ করলো
অভি-হ্যালো মেম, বাসাতে গিয়ে কি কিছু বলেছে আপনাকে?
আমি-বলছে বলেই তোমাকে কল দিলাম।
অভি- আপনার কণ্ঠ অমন রাগী রাগী শোনাচ্ছে ক্যান? ক্ষেপলেন কার উপর?
আমি- তোমাদের উপরই।তোমরা আসবে বিকেলে।
তোমরা আসবে বিকেলে আর আমার সকালে ক্লাস করা অফ।এইটা কি ঠিক হলো?বিয়ে হতে না হতেই ভার্সিটিতে যাওয়া অফ হচ্ছে।না জানি পরে কি হয়?
অভি- কি যে বলেন আপনি? একদিন ক্লাস না করলে কিছুই হবেনা। আর বিয়ের পরের বেপারে এখন ভাবতে হবেনা। ক্লাস তখনো করতে পারবেন।এক কাজ করেন কোনো ফ্রেন্ডকে বলে রাখেন কালকে ক্লাস করতে যাবেন না।যা ক্লাসে করাবে তা যেনো আপনাকে ছবি তুলে দেয়।ব্যাস, এতে রেগে যাবার কিছুই নেই।
আমি- হুম , বুঝেছি।তোমাকে বলে আর লাভ নেই।রাখছি।
অভিকে ফোন করার পরে এক বান্ধবীকে ফোন করলাম। দেখতে আসার কথা ওকে জানিয়ে দেওয়ার পরে ফয়িন্নী ট্রিটের বায়না ধরেছে।কি আর করা ক্লাসের পড়া জেনে নিতে হলে ট্রিট ত দিতেই হবে।তাই রাজি হয়ে গেলাম। ওর সাথে কথা বলার পরে সব ফ্রেন্ডরাও ফোন করা শুরু করেছে। হ্রামি টা সবাইকে বলে দিছে। কালকের পরের দিনই সবাইকে ট্রিট দিতেই হবে। না হলে ক্লাসই করতে দিবে না শান্তি মত।ওদের সবাইকে নিরুপায় দেখে ট্রিট দিতে রাজি হলাম।ফ্রেন্ড বেশি না , বারো জনের মত থাকবে।বারো জন এক সাথে ক্যাম্পাসের মাঠে বসলে , যেনো মাছের বাজারে মত অবস্থা হয়ে যায়।সবাই এক একটা বাচাল কম্পানীর ম্যানাজার।
পরেরদিন আর ভার্সিটিতে গেলাম না।
part 18

তবে মনে মনে ঠিক করে নিলাম ,অভিরে মজা দেখাবো। একদিন ক্লাসে না গেলে নাকি কিছুই হবে না।
বিকেলে অভি, অভির আব্বু,আম্মু সহ আরো চারজন আসছে।তাদের কে চিনি না।মামী শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন।খালামণি দুই বিচ্চুকে(নিশো, তিন্নী) বলেছে হালকা সাঁজোগোজো করাতে।ব্যাস লেগে গেছে ,দুইজনের সাঁজানোর প্রতিযোগীতা।অবস্থা দেখে বললাম, এমন ভাবে সাজাচ্ছিস যেনো আজকেই বিয়ে।যা ভাগ তোরা।আমি নিজেই সাজতে পারবো।ওরা বললো, তোমার সাঁজা লাগবেনা। আমরা আছি কি জন্য ?ওদের ঘষা মাজার হাত থেকে মুক্তি নিয়ে ড্রয়িং রুমে গেলাম।হাতে ফলের শরবতের গ্লাস ধরিয়ে দিয়েছে আমাকে।খালামণিকে বললাম, একটু অপেক্ষা করতে।তারপরে গ্লাস গুলো কিচেনে নিয়ে গিয়ে অভিকে যে গ্লাস দিবো সেটা দুই চামচ লবণ মিশিয়ে দিলাম।
তারপরে সবার সামনে গেলাম।সবাইকে সালাম দিয়ে শরবতের গ্লাস টেবিলে রাখলাম। মামা বললো, সবাইকে দিতে। ব্যাস আমি সবাইকে দিলাম।সাথে অভিকেও লবণের শবরতটা দিলাম। মনে মনে বললাম খাও খাও ভালো করে লবণের শরবত খাও।অভি গ্লাসে চুমুক দিয়েই মনে হচ্ছে শক্ড খাইছে।আমার যে কি হাসি পাচ্ছে ওর অবস্থা দেখে।সবাই খাচ্ছে শরবত, ও রেখে দিলে ত বেমানান দেখাবে।তাই কষ্ট করে পুরোটাই খেয়েছে।
তাদের মাঝে থেকে শুধু একজন আমার নাম জানতে চাইলো।তারপরে অভির আম্মু অভিকে রিং বের করে দিলে বললো আমাকে পড়িয়ে দিতে।ওদের মাঝে থেকে কে যেন বললো , আমার হাত এগিয়ে দিতে।আমি অভির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম।ফাজিলটা আমার হাতে চিমটি কেটে দিছে।ওর দিকে তাকিয়ে দেখি মুচকি মুচকি হাসতেছে।মনে মনে বললাম, আমাকে চিমটি কেটে হাসা হচ্ছে।একবার সুযোগ পাই তোমার হাসি বের করবো। আব্বু বললো, দুইজনের মাঝে আগে আলাদা ভাবে কথা বলা দরকার।আব্বু অভিকে নিয়ে রুমে যেতে বললো।মনে মনে বললাম, এই তো আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান আমার মনে কথা বুঝেছেন।ফাজিলের ডিব্বা এবার তোমার চিমটি দেওয়ার শখ মিটাবো। অভিকে নিয়ে আসতেই ওর হাতে দিলাম জোড়ে চিমটি।আরে মেম , করছেন টা কি ? ব্যথা পাচ্ছি ত।
বললাম, ভালো হইছে।সবার সামনে আমার চিমটি দিয়ে হাসছিলে ক্যান?
অভি বললো, আরে ও স্বপ্ন দেখছি কিনা সেটা বোঝার জন্য চিমটি দিছি।
বললাম, তুমি স্বপ্ন দেখছো কিনা সেজন্য আমাকে চিমটি দিছো।আমাকে দিলে স্বপ্ন কিনা বাস্তব সেটা বুঝতে পারবেনা।দাঁড়াও আরেক বার চিমটি দিচ্ছি।
অভি বললো, না না আমাকে আর চিমটি দিতে হবেনা।মাফ চাইছি।একবারের ব্যথায় তো এখনো যাচ্ছেনা।
তার আগে বলেন, আমাকে কি খাওয়াইছেন?
বললাম, সুস্বাদু না ? নতুন রেসিপি এটা মেড বাই মি। ফলের শরবতে লবণের স্যালাইন।পুষ্টি আর লবণের ঘাটতি পুরণ একসাথে হবে।ভালো হইছে না রেসিপি টা ?
অভি বললো, ডিম হইছে।এই সব কেউ জেনে শুনে খাবেনা।এই অখাদ্য টা আমাকে ক্যান খাওয়ালেন?আমি কি করেছি ?
বললাম , রাতের কথা ভুলে গেছো? একদিন ক্লাস না করলে কিছুই হবেনা।তাই একবার ওইসব অখাদ্য খেলে কিছুই হবেনা। আমার সাথে ত্যাড়ামি করলেও ওইসব খাবারই জুটবে।
অভি মাথায় হাত দিয়ে বললো, ও আল্লাহ এ আমি কার হাতে পড়লাম?এই শুনেন, আপনার যা খুশি কইরেন।আমি আর কিছুই বলবোনা।
রুমে দুই বিচ্চু আসলো, কি বেপার তোমরা দুইজনে ঝগড়া করতেছো ক্যান?
দিলাম এক ঝারি, তোদের দুইজনকে আড়ি পেতে শুনতে কে বলেছে?
নিতু ভয়ে ভয়ে বললো, আপু আমরা তেমন কিছুই শুনি নাই।বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছিলো তোমরা ঝগড়া করতেছো।
বললাম, তোরা কি বাইরে ছিলি ?
তিন্নী বললো, বাইরে ছিলাম না। নীচে যাবার জন্য ডাকতে এসেছি।
অভি বললো, তোমাদের আপুকে চলচিত্রে খলনায়িকার চরিত্রে দিলে খুব মানাতো।একদম খাপে খাপ।কোনো ছাড় দেওয়ার স্বভাব নেই।
তোরা যা পরে আসতেছি ওদের দুইজনকে বললাম ।
দুই হাতে অভির শার্টের কলার ধরে বললাম, আমি খলনায়িকা?
অভি হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে না পারাই বলে , দেখেন ওরা আবার আসছে।ছেড়ে দিয়ে যেই পিছনে তাকাতে যাবো।ওমনি অভি কপালে চুমু খেয়ে বলে আপনি বে বসে রাগে ফুলতে থাকেন। আমি নীচে গেলাম।ওর এমন কারবাক ধেখে আমি পুরাই থ মেরে গেলাম।
বিয়ের দিন ,তারিখ ঠিক করে অভিরা চলে গেলো। দুই সপ্তাহ পর বিয়ে।


part 19
রুমে এসে তিন্নী আর নিশো জানতে চাইলো আমি অভি কে আগে থেকে চিনি কিনা? বললাম, হুম চিনি একটু।ওই ফাজিলের কথা বাদ দে।
নিশো বললো, ঠিক আছে।তবে আমরা কালকে থেকেই শপিং করা শুরু করে দিবো।
বললাম, যা খুশি কর।এখন যা পড়তে বস তোরা।ওরা চলে যাবার পরে ফ্রেন্ডদের ফোন করে জানালাম।
অভি টেক্সট করেছে , স্যরি মেম আপনাকে রাগানোর জন্য।তবে আপনার রাগী মুখটা কে মিস করতেছি।ওরে উত্তর দিলাম, মিস করা বাদ, কালকে বিকেলে আমাদের ক্যাম্পাসে আসতে হবে।

পরেরদিন আম্মুর কাছে থেকে টাকা নিলাম।আম্মুকে বললাম, সবাইকে খাওয়াতে হবে।সেজন্য বাসাতে ফিরতেও দেরি হবে।আম্মুর থেকে টাকা নিয়ে ক্যাম্পাসে গেলাম।ক্লাস শেষে সবাই মিলে ক্যান্টিনে গেলাম।যে যা খাবে তাই অর্ডার করলো।খাওয়া শেষে সবাই মাঠে চলে গেলো।
আমি আর এক বান্ধবী(ফারিয়া) বিল দিতে গেলাম।ক্যান্টিন থেকে বের হবার সময় ফারিয়া বললো, নিতু তোকে একটা কথা বলবো।রাগ করবি না ? ওকে বল, রাগ করবোনা।
ও বললো, জানিস রিফাত তোকে ভালোবাসে।তুই কাউকে পছন্দ করিসনা, আর প্রেম করাও তোর পছন্দ না।তাই ও তোকে বলতে পারেনি।আমাদেরও বলতে না করেছে।যদি রাগ করে কারো সাথে কথা না বলিস।রাতে নাকি অনেক কেঁদেছে তোর জন্য।
ওর কথা শুনে আমি ত অবাক।কি বলিস এই সব?ও ত জানে আমি কাউকে ভালোবাসতে পারবোনা।তবুও কেনো কষ্ট পেতে গেলো?
মাঠে গেলাম, রিফাতকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে গেলাম।জানতে চাইলাম, কেনো এমন ভুল করলো?ও বললো, তোকে আমার ভালো লাগে এর বেশি কিছুনা।তুই এসব কথাতে কান দিস না।বন্ধুত্ব টা শুধু রাখিস , আর বেশি কিছুই চাইনা তোর কাছে থেকে।আমি চাই না কেউ আমার জন্য কষ্ট পাক।আমি জানি আমার কোনো দোষ নেই।তবুও স্যরি বললাম ওকে।

ধুরর, স্যরি বলতে হবেনা তোকে।চল আড্ডা দিতে যাই।তারপর সবার সাথে মাছের বাজারে যোগ দিলাম।এমন সময় অভির ফোন , রিসিভ করে জানিয়ে দিলাম মাঠে আসতে।অভিকে আসতে দেখে সবাইকে বললাম, তোদের জন্য সারপ্রাইজ চলে আসছে।ওরা সবাই অবাক হয়ে জানতে চাইলো কে আসছে?যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে,সেই চলে এসেছ।
তারপরে অভিকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম।সবার সাথে পরিচিত হয়ে অভিও আড্ডাতে বসলো।ফ্রেন্ডদের মধ্য থেকে একজন বললো, কি রে তুই না প্রেম করে বিয়ে করবি।তোর বিয়ে তো ফ্যামিলী থেকেই দিচ্ছে।আগে মিথ্যা বলতি ক্যান?
অভি বললো, বিয়ে কিন্তু পারিবারিক ভাবে হলেও পছন্দ কিন্তু আমাদের আগে থেকেই। এটা শুনে একজন বললো, চুরি করে ট্যাম্পু চালাস আর আমরা কিছু বললেই বলিস হরতাল। কাহিনী কি? কবে থেকে আপনাদের জল খাওয়া হচ্ছে?
বললাম, দেখ কোনো জল খাই নি , তাই বেশি কথা বলবিনা।
একজন বললো, কিন্তু কতদিনের পরিচয় ? আমাদের ত কিছুই বলিস নি।
অভি বললো, পরিচয় অনেকদিনের। কিন্তু আপনাদের বান্ধবী এখনো ভালোবাসে কিনা সেটাই বলে নাই।
বললাম, আসছে একজন ভালোবাসি শুনতে।আমার হয়ে তোরা কেউ বলে দে শুনে যাক উনি।
ওরা বললো, তোর বর তুই বলিস। আমরা আর ঝামেলার করতে যাই না।অভি সবাইকে বিয়েতে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করলো।আড্ডা শেষ করে চলে আসলাম বাসাতে। সবাই কে দেখলাম ড্রয়িং রুমে কি জানি হিসাব করতে।
রুমে আসলাম, ফ্রেস হয়ে একটা ঘুম দিলাম।দেখতে দেখতে বিয়ের তারিখ কাছে চলে আসে।এর মাঝে বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে বিলি করা হয়।বাবার বড় মেয়ে আর ওই দিকে অভিও একমাত্র সন্তান।

তাই আয়োজনের কোনো ত্রুটি বা কমতি রাখেনি।ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে হয়।বিয়ের প্রথম রাতে অভি শুধু একটা কথায় বলেছিলো, মেম, আপনাকে অনেক বিশ্বাস করে ভালোবেসেছি।এর অমর্যাদা করবেননা।আমার বাবা-মাকে কখনোই শুশুড়ি-শাশুড়ি মনে করবেননা।তাদেরকে নিজের বাবা-মা মনে করবেন।উনারা কোনো দোষ করলে আমাকে বলবেন, তবুও উনাদের মন কষ্ট দিবেননা।আর আমার বাবা- মা আপনাকে নিজের মেয়েই মনে করবে।
ওকে বললাম, তুমি ওসব নিয়ে ভেবোনা।আমি ঠিক সামলে নিবে সব কিছু।তারপর প্রথমবার অভিকে ভালোবাসি বলি।স্রষ্টা সেজন্য ধন্যবাদ জানাই এমন একজনকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি।
তারপরে কেটে গেছে তিন বছর। আজ আমাদের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী।ঘর সাজিয়ে অভির জন্য বসে আছি।সেই ফাঁকে ফিরে গিয়ে ছিলাম তিনবছর আগে।কলিং বেলের শব্দে আমার ভাবনাতে ছেদ পড়ে। অভি চলে এসেছে হাতে ফুল আর কেক নিয়ে।তারপর বাসার সবাই মিলে আমাদের বিবাহ বার্ষিকী পালন করি।ও হো , বলায় ত হয়নি আমাদের ঘরে একজন নতুন অথিতিও এসেছে।একদম অভির ফটোকপি।তবুও অভির অভিযোগ মেয়েটা নাকি আমার মত হয়েছে।দুইজনের নামের সাথেই মিল রেখে শশুড় মশায় নাম রেখেছে অন্তু। তা না হলে দুইজনের মাঝেই নিজের মেয়ে দাবি নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকতো।
মেয়েটা নয় মাসের হলেও দুষ্টামী করে অনেক।সেজন্যই বলে একদম মায়ের মত পাজি হয়েছে।
রাগ ,অভিমান ,হাসি,আনন্দে কেটে যাচ্ছে আমাদের টুনাটুনি সংসার।এভাবেই যেন থাকে আমাদের দুইজনের মাঝে সুপ্ত ভালোবাসা অটুট।
-: সমাপ্ত :-