বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯

গোধূলী প্রহর

নীলা জানে আবিরের সাথে আর কোনো দিন দেখা হবে না । দেখা হওয়াটা সম্ভবও না । তবুও নীলা আবিরকে এক পলক দেখার জন্য ছটফট করে । মধ্যরাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আবিরকে খোঁজার চেষ্টা করে । নীলা জানে না কোন তারার গুলোর মাঝে আবির লুকিয়ে আছে । এক সময় আবির পাগলের মত ভালোবাসত নীলাকে । কিন্তু নীলার আজ মনে হচ্ছে আবির তাকে ভালোবাসেনি । যদি ভালোবাসত তবে কখনোই অন্য জগতে চলে যেত না নীলাকে একা রেখে ।কথা রাখেনি আবির । স্বার্থপরের একাই মত চলে গেছে । আবির এক বারও ভাবেনি , তাকে ছাড়া তার পাগলীটা কতটা অগোছালো হয়ে যাবে । নীলা বড়ই অগোছালো হয়ে গেছে । নীলা বারান্দায় বসে বছর খানেক আগের কথা ভাবছে । সেমিষ্টার ব্রেকে সবাই বাড়ি যায় । আবিরও তাদের বাড়ি চলে যায় । যেদিন আবির বাড়ি চলে যায় ।

ওই দিনটিই ছিলো নীলার জীবনে কালময়ী দিন । নীলা আবিরের সাথে বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত আসে । রিহাদ আর আবিরের বাড়ি পাশাপাশি। তাই দুইজনে একসাথেই বাড়ি যায় ।আবির বাসের টিকেট কেটে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ।নীলাও বাসায় ফিরে আসে। ঘন্টা খানেক পর আবির নীলাকে কল দিয়ে জানায় ভাটারা চলে গেছে । কিন্তু নীলার মনটা সেদিন বেশিই খারাপ হয়েছিলো । সে আবিরকে বলেই ফেলে , "তোমার চলে যাওয়া মনে হচ্ছে যেন একেবারে চলে যাচ্ছো আসতে আসতে অনেক অনেক দূরে। " আবির সব কিছুতেই নীলার সাথে মজা করত । আবির বলে , আগে বেশি ভালোবাসছিলে । তাই কখনোই দূরত্বটা মনে হতোনা । সব সময় কাছেই মনে হতো । "বলেই আবির হাসতে থাকে । নীলা রেগে বলে , তার মনে এখন ভালোবাসিনা ?আবির তখন বলে , "ভালোবাসো তবে আগের থেকে অনেক কম ।" নীলা পরে কথা হবে বলে ফোনটা রেখে দিবে । আবির তখন হাসতে হাসতে বলে , "ওই পাগলী , আমি তো জানি তুমি অনেক ভালোবাসো । মজা করতে কি পারিনা তোমার সাথে ?
ঠিক আছে এখন রাখছি । তবে শোন , ভালোবাসি আমার পাগলীটাকে । নীলা তখন জানায় , কাউকে ভালোবাসতে হবে না । তবে তুমিও শুনে রেখো ভূতের দাদার দেখা পেলে, তাকে জানিও আমিও তাকে ভালোবাসি । আর বাড়ি পৌঁছে গেলে জানাবে। আবির পারবোনা বলে ফোনটা কেটে দেয় হাসতে হাসতে ।

কিছুদুর যাওয়ার পরই বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায় । আবিরের সাথে বন্ধু মাথায় আঘাত পায় । কিন্তু আবির বাস থেকে ছিটকে পড়ে যায় । আবির ঘটনাস্থলেই মারা যায় । নীলার সাথে আবিরের শেষ দেখাও আর হয়নি ।

রিহাদকে হসপিটালে ভর্তি করে । ওইদিকে নীলার দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে । সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যায়। আবিরের কোন খোঁজ নেই । কোন মতে রাত পার করে নীলা আবিরের ছোট বোন টুম্পাকে কল দেয় । অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর রিসিভ করে । টুম্পার সাথে নীলার মাঝে মাঝে কথা হতো আবির বাড়ি গেলেই । টুম্পা ফোন রিসিভ করেই কান্না শুরু করে । কি হয়েছে জানতে চায় নীলা । টুম্পা বলে শুধু ভাইয়া আর নেই বলেই কান্না শুরু করে । আর কিছুই বলতে পারিনি ।নীলা ফোনটা হাতে নিয়েই বসে পড়ে । তারপর থেকেই সবার থেকে দূরে থাকে । কারো আর মিশেনা , নীলার জীবন থেকে হাসি মাখা মুখটা চিরতরে বিলীন হয়ে যায়। বেশির ভাগ রাত কেটে যায় নীলার আকাশের দিকে তাকিয়ে । কখনো বারান্দায় বসে আবির রেখে যাওয়া স্মৃতি হাতরে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কেন এমন হয় জোনাকী আক্তার ************************** ভাঙা গড়ার খেলায় নিজেকে বারবার গড়ি, দু:খ-সুখের ভেলায় ঘুম ভাঙার মতই কেটে যায় সুখের রেশ...