বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯

তরঙ্গহীন জল
জোনাকী আক্তার

আনমনে আকাশ পানে চেয়ে
গুণা হত কত তারা হাতে হাত রেখে,
কখনোই ভাবিনি তোমারও ঠাঁই হবে
তারাগুলোর সাথে আকাশের এক কোণে ॥

স্বর্থপর তুমি একবারও ভাবোনি
তোমাকে ছাড়া কতটা সঙ্গীহীন আমি ,
কত বার ভাবি তোমার পথেই যাব চলে
মিছে ভালোবাসার অন্তরালে ॥

সুখগুলোও আজ বিষাদে পূর্ণ
চোখের কোণ থেকে ঝরে অশ্রু হয়ে
নিসঙ্গতার কষ্টগুলো ভালোবাসা হারানোর বেদনায় ॥
তোমার প্রতীক্ষায় 
 জোনাকী আক্তার

 ভুলে গিয়ে সব অভিমান
 ফিরে কি আসা যায় না একটিবার ?
 বিনিময়ে চাইবোনা কোনো প্রতিদান 
ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবো হৃদয় তোমার ।

 তোমার আমার মাঝে গড়ে ওঠা
 বিভেদের দেওয়াল চূর্ণ করে
 আবারো কি এক হওয়া যায় না সখা
 দু'টি দেহের এক আত্মার সমন্বয় চিরতরে ।

 ছেড়ে যাওয়া হাতটি আবারো ধরে
 যায়না কি হাঁটা একি পথে ?
 ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন আবারো সাজিয়ে
 দু'জনে মিলে যায় না পারি জমানো জীবনের রথে ? 

যেভাবেই পারো ফিরে আসো তুমি
 দিনমান কেটে যায় তোমায় ভেবে ,
 তোমার প্রতীক্ষায় রয়েছি আমি 
 না ফেরা অবধি তোমার ভালোবাসা তোমারি রবে
গোধূলী প্রহর

নীলা জানে আবিরের সাথে আর কোনো দিন দেখা হবে না । দেখা হওয়াটা সম্ভবও না । তবুও নীলা আবিরকে এক পলক দেখার জন্য ছটফট করে । মধ্যরাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আবিরকে খোঁজার চেষ্টা করে । নীলা জানে না কোন তারার গুলোর মাঝে আবির লুকিয়ে আছে । এক সময় আবির পাগলের মত ভালোবাসত নীলাকে । কিন্তু নীলার আজ মনে হচ্ছে আবির তাকে ভালোবাসেনি । যদি ভালোবাসত তবে কখনোই অন্য জগতে চলে যেত না নীলাকে একা রেখে ।কথা রাখেনি আবির । স্বার্থপরের একাই মত চলে গেছে । আবির এক বারও ভাবেনি , তাকে ছাড়া তার পাগলীটা কতটা অগোছালো হয়ে যাবে । নীলা বড়ই অগোছালো হয়ে গেছে । নীলা বারান্দায় বসে বছর খানেক আগের কথা ভাবছে । সেমিষ্টার ব্রেকে সবাই বাড়ি যায় । আবিরও তাদের বাড়ি চলে যায় । যেদিন আবির বাড়ি চলে যায় ।

ওই দিনটিই ছিলো নীলার জীবনে কালময়ী দিন । নীলা আবিরের সাথে বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত আসে । রিহাদ আর আবিরের বাড়ি পাশাপাশি। তাই দুইজনে একসাথেই বাড়ি যায় ।আবির বাসের টিকেট কেটে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ।নীলাও বাসায় ফিরে আসে। ঘন্টা খানেক পর আবির নীলাকে কল দিয়ে জানায় ভাটারা চলে গেছে । কিন্তু নীলার মনটা সেদিন বেশিই খারাপ হয়েছিলো । সে আবিরকে বলেই ফেলে , "তোমার চলে যাওয়া মনে হচ্ছে যেন একেবারে চলে যাচ্ছো আসতে আসতে অনেক অনেক দূরে। " আবির সব কিছুতেই নীলার সাথে মজা করত । আবির বলে , আগে বেশি ভালোবাসছিলে । তাই কখনোই দূরত্বটা মনে হতোনা । সব সময় কাছেই মনে হতো । "বলেই আবির হাসতে থাকে । নীলা রেগে বলে , তার মনে এখন ভালোবাসিনা ?আবির তখন বলে , "ভালোবাসো তবে আগের থেকে অনেক কম ।" নীলা পরে কথা হবে বলে ফোনটা রেখে দিবে । আবির তখন হাসতে হাসতে বলে , "ওই পাগলী , আমি তো জানি তুমি অনেক ভালোবাসো । মজা করতে কি পারিনা তোমার সাথে ?
ঠিক আছে এখন রাখছি । তবে শোন , ভালোবাসি আমার পাগলীটাকে । নীলা তখন জানায় , কাউকে ভালোবাসতে হবে না । তবে তুমিও শুনে রেখো ভূতের দাদার দেখা পেলে, তাকে জানিও আমিও তাকে ভালোবাসি । আর বাড়ি পৌঁছে গেলে জানাবে। আবির পারবোনা বলে ফোনটা কেটে দেয় হাসতে হাসতে ।

কিছুদুর যাওয়ার পরই বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায় । আবিরের সাথে বন্ধু মাথায় আঘাত পায় । কিন্তু আবির বাস থেকে ছিটকে পড়ে যায় । আবির ঘটনাস্থলেই মারা যায় । নীলার সাথে আবিরের শেষ দেখাও আর হয়নি ।

রিহাদকে হসপিটালে ভর্তি করে । ওইদিকে নীলার দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে । সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যায়। আবিরের কোন খোঁজ নেই । কোন মতে রাত পার করে নীলা আবিরের ছোট বোন টুম্পাকে কল দেয় । অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর রিসিভ করে । টুম্পার সাথে নীলার মাঝে মাঝে কথা হতো আবির বাড়ি গেলেই । টুম্পা ফোন রিসিভ করেই কান্না শুরু করে । কি হয়েছে জানতে চায় নীলা । টুম্পা বলে শুধু ভাইয়া আর নেই বলেই কান্না শুরু করে । আর কিছুই বলতে পারিনি ।নীলা ফোনটা হাতে নিয়েই বসে পড়ে । তারপর থেকেই সবার থেকে দূরে থাকে । কারো আর মিশেনা , নীলার জীবন থেকে হাসি মাখা মুখটা চিরতরে বিলীন হয়ে যায়। বেশির ভাগ রাত কেটে যায় নীলার আকাশের দিকে তাকিয়ে । কখনো বারান্দায় বসে আবির রেখে যাওয়া স্মৃতি হাতরে ।
বসন্ত বিদায়
জোনাকী আক্তার
****************************
বসন্ত তোমাকে জানাই বিদায়
ফের এসো ললনার হাতে
লাল- হলুদ ফুলের সমারোহে
রচিত ভালোবাসার তোড়ায়।
ফাল্গুনে ভ্রমরের ঘুম ভাঙানির গুনগুন গান,
চৈত্রের খর রৌদ্রের দাবদাহের লগ্নে
এক পশলা ঝড়ো হাওয়া হয়ে
তোমার আগমনীর বার্তা দিও জানান।
কোকিলের মৃদু মধুর কুহু তানে
প্রকৃতিতে সঞ্চারিত হয় নব প্রাণ,
যখন বসন্ত এসে ছুঁয়ে দেয় প্রকৃতি ললাটে
ফের এসো বসন্ত বাঙালির টানে।
আজ বিষন্ন বদনে ঝির ঝির হিমেল হাওয়ায়
জানাই বিদায় হে ঋতুরাজ,
বছর ঘুরে আবারও এসো ফিরে
সাজিয়ে পশলা নতুনত্বের ভালোবাসায়।
অনাকাঙ্খিত জীবন
জোনাকী আক্তার
**************************
জীবন সে তো বর্ণচোরা
কখনো রঙিন , কখনো বা সাদা মাটা
মেঘের পালকে ভর করে
ভেসে চলে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
খর রৌদ্রের মাঝে , ঝড়বৃষ্টিতে ভিজে
প্লাষ্টিকের বোতল কিংবা অব্যবহৃত ফেলে দেওয়া জিনিস
সারাদিন ব্যাপী অনাহার-অর্ধাহারে সংগ্রহ করে
সাঁঝের বেলায় বিক্রি করে কয়েক টাকা সেরে।
এরাই সুশীল সমাজে টোকাই কিংবা পথ শিশু নামে অভিহিত
এদের পরিবার বলতে থাকে শুধুই মা;
কখনো অন্যের কাছে আশ্রিত
কারও আবার সেটুকুও নেই
দলবদ্ধ হয়ে রাত্রি যাপন করে রেলষ্টেশনে।
মাতৃ-পিতৃর স্নেহহীন বেড়ে উঠা শিশুগুলো
সমাজের মুখোশধারী লোকের অপশক্তি,
এদের দিয়েই টাকার বিনিময়ে হাতিয়ে নেয়
মাদক পাচার কিংবা সমাজদ্রোহী অপকাজ।
জীবনটা এদের বড্ড অনাকাঙ্খিত
অবহেলায় জর্জরিত জীবনে দু'মুঠো অন্নের বিনিময়ে জীবন বাজি রাখে,
স্রষ্টা তুমি হেফাজতে রেখো প্রতিটি পথশিশুকে
রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে আহার দিও , মাথার উপর ছাদ দিও রাত্রিকালে।
মেঘলা আকাশ
জোনাকী আক্তার
*******************
তোর মেঘলা আকাশ
আমায় করে উদাস
আমার বৃষ্টির আহ্বানে
তুই বিমুখ করিসনে।
আমার বিরস রজনী
বদ্ধ পাখির ডানাঝাপ্টানি,
তোর মনের অলিগলিতে
ঘুরিফিরি তোরই অজান্তে।
তোর মেঘলা আকাশ
আমার ভাবনার অবকাশ,
আমার মেঘলা বিজনবেলা
লাগে ভারি একেলা।
দোহায় লাগে তোর
এনে দে একমুঠো রোদ্দুর,
তোর মেঘলা বদনে
আমার জল ঝরে নয়নে।
তোর মেঘলা আকাশ
কেন আমায় করে উদাস ?
মৃত্যুকূপ
জোনাকী আক্তার
****************************
বিষাক্ত এ শহরের অলিতে-গলিতে
তাজা তাজা মৃত লাশের স্তূপ,
কিছুদিন চলে শোকমিছিল আর হৈ-হুল্লুড়
এরপরেই হয়ে যায় একেবারে নিশ্চুপ।
আমরা প্রতিনিয়তই ভুলে যাই
এক একটি লোমহর্ষক মৃত লাশের গল্প,
বোকা মানুষগুলোকে আশা-ভরসা দিয়ে
রাত-দুপুরে কত দেখাই কল্প।
এরপর আবারও এ বিষাক্ত শহরে
শব্দদূষণ ঘটে অর্ধমৃত মানুষগুলোর আহাজারিতে,
তখন মুখের বুলিতে সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত
কেউ বা এক-দুই করে মৃতের সংখ্যা গুণতে।
বিষাক্ত এ শহরের আকাশে-বাতাসে
ধুলি-বালির প্রতিটি কণায় যেন লুকায়িত,
এক একটি মৃত্যুকূপ চোরাবালির মত
না জানি কোন অভিশাপে মৃত্যুর কোলে হচ্ছে শায়িত।
আকুল প্রার্থনা তোমার নিকট, হে বিধিরাম
রক্ষা করো তোমার সকল নির্বোধ সৃষ্টি
ক্ষমা করো সকলের ভুল-ত্রুটি
তুলে নাও লোমহর্ষক অভিসম্পাতের দৃষ্টি।
বসন্তের আগমন
জোনাকী আক্তার
***********************
আজ বসন্ত এসে গেছে
কোকিলের গানে গানে,
গাছে-গাছে , শাখে-শাখে
পত্র-পল্লবে, পুষ্প-মঞ্জরিতে।
আজ প্রকৃতি সেজেছে নবরূপে
বাতাসে-বাতাসে মুকুলের গন্ধে,
পাখ-পাখালির কলতান ধ্বনিতে
মন নেচে উঠে বসন্তের উল্লাসে।
আজ বসন্ত এসে গেছে
কিশোরীর বাতাসের তালে-তালে
নৃত্য করা খোলা চুলে
হলুদের মাঝে লাল পেরে শাড়িতে।
আজ মুখরিত কোলাহলের মাঝে
আমি হারাতে চাই তোমার সাথে,
বসন্তের নয়নাভিরাম সাজ
আমি ছুঁতে চাই তোমায় নিয়ে।
রামধনুকের সাতরঙে রাঙিয়ে
আমিও জানিয়ে দিতে চাই,
আজ বসন্ত এসে গেছে
যদি তুমি থাকো পাশে ॥
তুমি এসো
জোনাকী আক্তার
****************************
যদি তুমি এসো আলোর মশাল হাতে
আমার ভালোবাসার আঙ্গিনায় ,
তবে ঘুচে যাবে আমার শূণ্য হৃদয়ের হাহাকার
জ্যোতিময় হয়ে উঠবে আমার হৃদয়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকোষ্ঠ।
যদি কখনো তোমার চরণ পড়ে
আমার শহরের বিবর্ণ ক্যানভাসে,
তবে গোটা শহর ছেয়ে যাবে
বাহারি রঙের রঙিন ফানুসে।
যদি তুমি এসো স্বপ্ন কিংবা কল্পনায়
আমার ভাঙ্গা আয়নার মত স্বপ্নগুলো,
নিমিষেই যেন জোড়া লেগে দেখাবে
শুধুই তোমাকে নিয়ে ঘরবাঁধার স্বপ্ন।
যদি কখনো তুমি উঁকি দাও ; আমার ভাবনায়
তবে আমি কবিতায় লিখে জানাবো সবাইকে,
তোমরা এসে এক পলক দেখে যাও
যে এসেছে সেই তো আমার ভালোবাসার অনিমেষ।
তুমি এসো অন্তত একটি বারের জন্য
আমার মনের আঙ্গিনায় কিংবা দৃষ্টির সীমানায়,
তোমাকে একটি বার ছুঁয়ে দেখবো
তারপর সে স্মৃতিটুকু আঁকড়ে অনন্তকাল পার করে দিবো।
বিবেকের দহন
জোনাকী আক্তার
*********************
এখনো ঘুমাচ্ছো?
এই যে কত আহাজারি চারপাশে,
বাতাসে বাতাসে আর্তনাদের ধ্বনি।
তুমি নাকি সাদা কাগজের বুকে কলম চষে-
ভালোবাসার ছলাকলা নিয়ে কত কিছু লিখো ?
ইচ্ছা কি করে না?
অন্যায়-অবিচার, অশৃঙ্খল আর অনিয়মের বিরুদ্ধে -
নির্দোষী নিরহদের চোখে অশ্রু ঝরার কথা লিখতে ?
তবে কিসের এত ঘুম তোমার ?
নাকি জেগে উঠতে ভয় পাচ্ছো ?
কিসের ভয়ে ঘুমন্ত তুমি,
অকালে প্রাণ হারানোর ভয়ে ?
যেখানে পদে পদেই মনে হয়
মৃত্যুর ফাঁদ পাতা ছড়ানো ছিটানো জাল,
সেখানে কি বাঁচার নিশ্চয়তা আছে?
অসংখ্য মৃতদের মিছিলের দাবী কি তুমি শুনতে পাচ্ছো না ?
জেগে উঠো তুমি-
নির্ভীক যোদ্ধার মত হাতে কলম তুলে নাও,
লিখনিতে ফুটিয়ে তুলো প্রতিটি
অন্যায়, অত্যাচারী জালিমের প্রতিচ্ছবি।
ভয় কিসে বলো ?
অসীর চেয়ে মসীর শক্তি বেশী
একদিন না একদিন শেষ হবেই
তোমার এ অঘোষিত যুদ্ধের ময়দান।
তাং-৩/০১/২০১৯ইং
বলছি তোমায়
জোনাকী আক্তার
***************************
যদি তোমায় বলি....
হরেক রকমের উপমা অনুকরন করে
আমার রচিত কাব্যে তোমায় ছন্দ হতে,
বলো হবে কি অনিমেষ, বলো হবে কি ?
আমার আকাশ ডুবে আছে কালো মেঘে ঢেকে
আলোকের ছোঁয়ার জন্য যেন তৃষ্ণার্ত,
সেই আকাশে চাঁদ হয়ে জ্যোত্‍স্নার আলো বিলাতে
বলো পারবে কি অনিমেষ, বলো পারবে কি?
যদি তোমায় বলি....
আমার ভূবন জুড়ে যে শূণ্যতার বসবাস,
তোমার ছোঁয়ায় পূর্ণতায় ভরিয়ে দিতে
বলো দিবে কি অনিমেষ, বলো দিবে কি ?
এই যে আমার একলা পথ চলা
হোঁচট খেয়ে মাঝপথে কখনো থেমে যাওয়া,
ছায়াসঙ্গী হয়ে হাতটি ধরে পথের দিশারী হতে
বলো হবে কি অনিমেষ, বলো হবে কি ?
যদি তোমায় বলি.......
পাশে বসে হাতের উপর হাতটি রেখে,
সাতজনমের সাথী হয়ে আপন করে নিতে
বলো নিবে কি অনিমেষ, বলো নিবে কি?
কথার উপর কথা বলে কত কথায় বলে থাকি
কল্পে তোমায় সাজিয়ে যখন মনের কথা বলে ফেলি
তখন তুমি বিরক্ত হয়ে দূরে চলে যাবে নাতো
বলো যাবে কি অনিমেষ, বলো যাবে কি ?
Related image

কেন এমন হয় জোনাকী আক্তার ************************** ভাঙা গড়ার খেলায় নিজেকে বারবার গড়ি, দু:খ-সুখের ভেলায় ঘুম ভাঙার মতই কেটে যায় সুখের রেশ...