শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৭

মধুমিতা
জোনাকী আক্তার
******************
তোমার ফেরার পথ পানে চেয়ে 
চোখের জলে মুছে যায় চোখের কাজল
জানিনা তুমি কেমন আছো, আছো কোথায় লুকিয়ে... ?
জানো তো আমি, তোমায় ছাড়া অপূর্ণ-অচল ।


ভোর বেলায় পাখির কূজনে ঘুম ভেঙ্গে যায়
অচেতন মন বলে উঠে, এই বুঝি এলে
কষাঘাত করলে সদর দরজায়
নিরাশ হয়ে ফিরি দরজাটুকু মেলে।


বেলা বহে যায়, যায় সূর্যও অস্তাচলে এক সময়
কিন্তু তোমার কোনো পদচিহ্ন পড়েনা
তোমার আমার স্মৃতি জড়ানো এই আঙিনায় ,
আমাকে মধুমিতা বলে আর তো কেউ ডাকেনা ।


অনেক ইচ্ছা করে তোমার হাত ধরে
রেলপথ ধরে হেঁটে হেঁটে দূরের পথ পাড়ি দিতে ,
কিন্তু তুমি যে স্বার্থপরের মত করে
চলে গেলে একাই , পারলে না সাথে নিতে ?


অবুঝ মন বুঝতে চায়না
যে দিয়েছে পাড়ি অজানার পথে
সে যে আর কোনো দিনই ফিরবে না
তার যে আর নেই সখ্যতা কারো সাথে
অন্য কারো জন্য যে তার মন পুড়েনা ।


তাই তোমার প্রতীক্ষাতে থাকি
ফিরবে তুমি একদিন দেখা হবেই ,
সেদিনটাতে হয়তো থাকবেনা দেহে প্রাণ পাখি
আমিও তোমার সাথে যাবোই ।

মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৭


একটা চিন্তা মাথায় বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে । কেনো জানি মনে হচ্ছে , আমি তোমাকে কখনোই ভুলে যেতে পারবোনা । সময়ের ব্যস্ততার জন্য হয়তো ভুলে থাকতে পারবো , কিন্তু ভুল করেও ভুলে যেতে পারবোনা । যেদিন তোমাকে শেষ বারের মত বিদায় দিলাম। সেদিন খুব সহজেই বলেছিলাম , আমি পারবো তোমাকে ভুলে যেতে । কারন স্বার্থপর মানুষগুলো কখনো পিছুটান থাকতে নেই । আমিও সেদিন পিছুটান গুলো অবজ্ঞা করেছিলাম । কিন্তু তুমি বলেছিলে, পারবেনা কখনোই আমাকে ভুলে যেতে। আমি তোমার মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে মিশে গেছি। আমাকে ভুলে যাওয়া অতটা সহজ নয়। সব থেকে বড় কথা , তুমি আমাকে ভালোবাসো । মানুষ সবকিছু ভুলতে পারলেও , তার ভালোবাসাকে ভুলতে পারেনা । কখনোই পারা সম্ভব না। মনে করে দিবে বার বার একাকী বিকেল , মধ্যরাত , ঝুম বৃষ্টি । নীরবে শুনেছিলাম , কোনো মতে চোখের জল লুকিয়ে মিকি হাসি দিয়েছিলাম। তুমি বুঝেছিলে আমার অভিনয়টুকু । কিন্তু তোমার দায়িত্বের কাছে আর তোমার পরিবারের কাছে তুমি ছিলে আবদ্ধ । তোমার হয়তো অনেক কথায় বলার ছিলো । কিন্তু আবেগের কাছে হেরে যাওয়ার ভয়ে পালিয়ে গেলে। হয়তো একা থাকলে তোমার চোখ থেকেও বৃষ্টি নামবে। সবার আড়ালে ঝরবে। ছেলেদের যে কারো সামনে কাঁদতে নেই। নিথর মূর্তির মত চলে যেতে দেখছিলাম , ইচ্ছা করেছিলো শেষবারের মত বলতে love u more than thousands . নাহ , ইচ্ছাগুলোকে দমন করেছিলাম । ভালোবাসি বলার অধিকার তখন থেকেই ছেড়ে দিয়েছি। যখন তোমাকে অন্য পথের পথিক হতে বলেছিলাম। এছাড়া আর কোনো পথই ছিলোনা। তুমি আমি এমন এক নীতির কাছে আবদ্ধ ছিলাম , সেখানে কোনো ভালোবাসার অস্তিত্ব নেই ।আজ জানতে ইচ্ছা করছে , তুমি কি ভালো আছে ? হয়তো তুমি ভালো আছো , ভালোই থেকো ।আর আমি ... , আমার কথা বাদই দিলাম। স্বার্থপরা সব সময় ভালো থাকে । আমিও অনেক ভালো আছি ।
একদিন আমিও জয়ী হবো
জোনাকী আক্তার
*************************
আমি হেরে যাই বার বার
কিছু প্রতিকূল পরিস্থিতির কাছে ,
কখনো বা সময়ের নিষ্ঠুরতার কাছে
হারতে হারতে পিঠ ঠেকে যায় দেওয়ালে ।
হেরে গিয়েও পরাজয় মানতে শিখিনি
আমার পরাজয়ে যে ফুটে উঠবে
তোমার ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ,
অবলীলায় সব দু:খ সইতে রাজি
কিন্তু ভালোবাসার মানুষের তাচ্ছিল্যতাকে নয়।
জীবনের পথে হেরে যাওয়ার জন্য তুমিই দায়ী
তাই বলে ভেবোনা তোমাকে দোষী করবো ,
নিজের মত করে আবারো চলবো
সেই পথেই যে পথে কাঁটা বিছানো ,
কষ্ট হবে , দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়াবে
কখনো হোঁচট খেয়ে বসে পরবো
সেই ব্যথায় আর যণ্ত্রনায় কাতরাবো ।
তবুও থেমে যাবো না কখনোই
কারন দমে যাওয়ার পাত্র আমি নই,
আমি দমে গেলে যে............
তোমার ঠোঁটে ফুটে উঠবে তাচ্ছিল্যের হাসি ,
অবলীলায় সব দু:খ সইতে রাজি
কিন্তু ভালোবাসার মানুষের তাচ্ছিল্যতাকে নয় ।
দেখে নিও সব বৈরীকে জয় করে
কাঁটা বিছানো পথ পাড়ি দিয়ে
আমি পৌঁছে যাবো জীবনের পথের শেষ প্রান্তে ,
সেদিন তোমার সমস্ত অস্তিত্ব মন থেকে মুছে ফেলবো
তুমি হবে সেদিন পরাজিত ,
তোমার চোখে মুখে ভেসে ভেসে উঠবে
অনুসোচনা আর পরিতাপের চিহ্ন ,
তখন জয়ের হাসিটা থাকবে আমার ঠোঁটে ।

Image may contain: one or more people, people standing, ocean, sky, outdoor, nature and water
স্তব্দ আমি 
জোনাকী আক্তার

*********
হৃদয়ের বন্ধন তুমি করেছো ছিন্ন
কি এমন ভুল শুধরে নিলেই তো হতো ,
কিন্তু তুমি করলে তারই ভিন্ন
শুধরে নিতে হয়তো কিছু সময় অপব্যয় হতো ।
তখনো আমি ছিলাম স্তব্দ
জমানো কথাগুলো সেদিন আর বলা হয়নি,
আমার কণ্ঠ যে ছিলো বাকরুদ্ধ
পাশের থাকার কথা একবারের জন্যও সেদিন বলতে পারিনি ।
আজও সেই আগের মতই আমি স্তব্ধ
তবে সেদিন আর আজকের মাঝে তফাত্‍ অনেক
সিডরের আঘাতের পর যেমন প্রকৃতি লন্ড ভন্ড
প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ার পর যেমন-
চারপাশটা স্তব্ধ আর নিস্তেজ হয়ে পড়ে ,
আজ আমি তারই মতই বেঁচে আছি ।
একেই কি বেঁচে বলে ??
হয়তো বলে তা আর আমার জানা নেই
জানতে ইচ্ছা হয়না একবারও ।
শুধু জানতে চাই আর কত কাল
এভাবেই স্তব্দ থাকবো ।
আমি হতে চাই 
জোনাকী আক্তার
************************
আমি গ্রীষ্মের কাঠফাঁটা রোদ্দুরে ছায়া হয়ে
তোমার পাশে সারাটিখন থাকতে চাই,
আমি ক্লান্ত দেহে ফিরবে যখন তালপাতার পাখা হয়ে
তোমার পথের ক্লান্তি দূর করতে চাই ।
আমি বরষায় ফোটা প্ৰথম কদমফুল হয়ে
তোমার ভালোবাসাকে সংবর্ধনা জানাতে চাই ,
আমি রাতের বেলায় মেঘে ঢাকা তারা হয়ে
তোমার সাথে লুকোচুরি খেলতে চাই ।
আমি শরতের ঘুড়ি হয়ে
তোমার হৃদয়ের আকাশে উড়তে চাই ,
মৃদু হাওয়ায় দোলা শুভ্র কাশফুল হয়ে
তোমায় একবার ছুঁতে চাই ।
আমি হেমন্তের ভোরে ফোটা শিউলী হয়ে
তোমার হৃদয়াঙ্গন সুরভিত করতে চাই ,
হিমেল হাওয়ায় ভালোবাসার চাদর হয়ে
তোমার সর্বাঙ্গ জড়িয়ে রাখতে চাই ।
আমি কনকনে শীতের সকালে মিষ্টি রোদ হয়ে
তোমার চারপাশে উষ্ণতায় ভরিয়ে দিতে চাই,
কখনো বা ঘন কুয়াশায় শিশির হয়ে
তোমার অঙ্গন খেলার ছলে ভিজিয়ে দিতে চাই ।
আমি বসন্তের কোকিল হয়ে
তোমার মনে ভালোবাসার গান শুনাতে চাই ,
আমি সাত রঙে সজ্জিত প্রজাপতি হয়ে
তোমার মনের বাগানে ডানা মেলে উড়তে চাই ।
আমি তোমায় বারো মাসে ছয়টি ঋতু হয়ে
সারাটি বছর ভালোবাসতে চাই ।
নির্ঘুম রাত
জোনাকী আক্তার 
______________________

মধ্যরাত চারপাশের কোলাহল থেমে গেছে
দূর থেকে ভেসে ঝিঁঝিপোকার ডাক,
পথে নেই কোনো পথিকের পদচিহ্ন
যে যার আপন নীড়ে ফিরেছে ।
সবাই ঘুমের ঘোরে অচেতন
শুধু আমি একলা জেগে রই ,
রাতজাগা তারাগুলোর সাথে
জোনাকির মিটিমিটি আলো জ্বলা নেভা দেখে ।
জানি তুমিও পাড়ি দিয়েছো ঘুমের দেশে
হয়তো তুমি সুখনিদ্রায় সুখের স্বপ্নে বিমোহিত
কিন্তু স্বপ্ন দেখার ভয়ে
রাতগুলো নির্ঘুম কাটিয়ে দেয় ,
কারন আমি আর কোনো স্বপ্ন দেখতে চাইনা
যদি ঘুমের ঘোর কাটার সাথে
আবারো স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় ।
আমি নতুন করে আর কষ্ট পেতে চাইনা ,
অনেক ঝরেছে চোখের জল
নতুন করে আর চোখের জল ঝরাতে চাইনা ।
যাচ্ছে কেটে এভাবেই কত নির্ঘুম রাত
কেউ রাখেনা তার হিসাব ,
বলেনা কেউ আর শাসনের স্বরে
ঢের হয়েছে রাত আর জেগোনা ।
সময়ের সাথে সাথে সবই বদলে যায়
যেমনটা বদলে গেছো তুমি
এমন কি আমিও বদলে গেছি ,
বদলে গেছে জীবনের দিক ,
সেই সাথে আমি ভাসি চোখের জলে
শুধু তুমিই সুখে থেকো ।
তুমিও পরাজিত
জোনাকী আক্তার
****************
বুঝিনি আগে প্রেম মানে
কষ্ট কে কাছে ডাকা 
দু:খ কে আলিঙ্গন করা ,
তোমার প্রেমে পড়েছি বলেই
আজ জীবন আমার দু:খ-কষ্টে জর্জরিত ।
ভালোবাসার মানে কি তবে
নীরবে চোখের জলে নেয়া যাওয়া ?
তোমায় ভালোবাসার জন্য
আঘাত পেতে হৃদয় ক্ষত বিক্ষত ,
যেনো আমি না জেনে না শুনে
ভিরুলের চাকে দিয়েছি হাত,
সে কারনেই হৃদয়ে বাজে ব্যথার আর্তনাদ ।
আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখালে তুমি
বোকার মত আমি শুধুই দেখে গেলাম ,
যেদিন বুঝলাম সে স্বপ্ন পূরণ হবার নয়
সেদিন থেকে মানতে হলো
কেউ আর কারো নয় ।
তোমার সুনিপুন অভিনয়ের কাছে
আমি বার বার হেরে গিয়েছি,
তুমি জয়ী হয়েছো
কিন্তু ভেবে দেখো ভালোবাসার বিচারে
তুমিই বাজে ভাবে পরাজিত ,
কারন আমার ভালোবাসার মাঝে
কোনো খুঁত তুমি খোঁজে পাবেনা ।
আমাদের ছোট্ট গাঁ
জোনকী আক্তার
*******************
শান্ত নিবিড় ছায়ায় ঘেরা আমাদের ছোট্ট গাঁ
শস্য - শ্যামল আর চির সবুজের মাঠ
জড়িয়ে যায় দৃষ্টি , যত যায় দেখা
এঁকে বেঁকে বয়ে যাওয়া মৃগী নদীর ঘাট ।
পিচঢালা মেঠো পথ , দুই ধারে গাছের সারি
গাঁ থেকে চলে গেছে শহরের মুখ পানে
থাকি যতই দূরে ইচ্ছা করে বার বার ফিরি
আমাদের ছোট্ট গাঁয়ে নাড়ীর টানে।
গাঁয়ের সহজ-সরল মানুষগুলোর জীবন
মানস পটে ভেসে ওঠা সদা হাস্য মুখ,
হৃদয়ের মাঝে গড়ে ওঠে দূর্ভেদ্য এক আত্মিক বন্ধন
রাখলে চরণ নিজ গাঁয়ে খোঁজে পাই পরম সুখ ।
চলে যাই গাঁ ছেড়ে জীবনের তাগিদে জীবিকার খোঁজে
কর্ম ব্যস্ত নগরীতে মিশে যাই,
অবসরে মন শিল্পীর মত রং তুলি দিয়ে আঁকে অন্তরাজ্যে
গাঁয়ে ফেলে আসা দিন যেনো ফিরে পাই ।
ভালো থাকুক গাঁয়ের পথ-ঘাট
শৈশবে ফেলে আসা দিন,
দুরন্তপনায় মেতে থাকা খেলার মাঠ
গাঁয়ের মানুষগুলোর মুখ থাকুক অমলিন ।

কেন এমন হয় জোনাকী আক্তার ************************** ভাঙা গড়ার খেলায় নিজেকে বারবার গড়ি, দু:খ-সুখের ভেলায় ঘুম ভাঙার মতই কেটে যায় সুখের রেশ...