রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

কথা দিলাম
জোনাকী আক্তার
*********************
শুধু তোমায় ভেবে অনিমেষ
আমার অজস্র কবিতার সমাবেশ,
তুমি আমার রচিত কাব্যের কথামালা
কলমের খোঁচায় ফুটে উঠা ছন্দমালা।
কিন্তু তুমি মিছে সংশয়ে সংকিত
শুধু তোমার জন্যই ভাবনাগুলো উন্মোচিত,
তুমি শুধু একটি বার হাতটি ধরো
কথা দিলাম, আমি হবো না আর কারো ।
শুধু তোমায় বিমোহিত করার জন্য অনিমেষ
এ ঋতুরাজ বসন্তে ফোটা বাহারি পুষ্পে সজ্জিত কেশ,
তুমি আমার হৃদয়ে বাজা ভালোবাসার সুর
আমি তোমার সুরেই হই বারংবার বিভোর ।
কিন্তু তুমি মিছে সংশয়ে আতংকিত
আমার এ ভালোবাসার বাগান তোমার জন্যই নিবেদিত,
তুমি শুধু একটি বার হাতটি ধরো
কথা দিলাম, আমি হবো না আর কারো ।
শুধু তোমায় দিবো ভেবে অনিমেষ
সঞ্চিত রয়েছে যে ভালোবাসা হবেনা নি:শেষ,
তুমি ষোড়শী বালিকার যৌবনের ন্যায় উচ্ছ্বাস
আমার হৃদয়ে ভালোবাসার বানের আভাস ।
কিন্তু তুমি মিছে সংশয়ে আতংকিত
আমার সুপ্ত ভালোবাসার তোমার জন্যই সংরক্ষিত,
তুমি শুধু একটি বার হাতটি ধরো
কথা দিলাম, আমি হবো না আর কারো।

রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

@ প্রতিযোগীতার জন্য @

গল্প :- একজন প্রহরী
জোনাকী আক্তার

প্রতিটি মানুষের কষ্ট লাগে । যখন কাছের কেউ হাত মুষ্টিবদ্ধ রেখে তাকে বলে , "আজ না গেলে কি হয় না ? থাকো না আর একটি দিন আমার পাশে "।
আমি রনি সেই হতভাগ্য ।যাকে ভালোবেসে ঘরে এনিছিলাম, তার এমন ছোট আবদার পূরণ করার ক্ষমতা আমার কাছে নেই। তিন ভাই এর মাঝে আমি সবার ছোট। বাবা-মার আদরের সন্তান ছিলাম।দশম শ্রেণীতে উঠার পর নিপুকে ভালোবেসে বিয়ে করি। অবশ্য বিয়েটা করেছিলাম বাবা, মাকে না জানিয়ে। প্রথমে মেনে না নিলেও ,পরে দুই পরিবারই মেনে নেন।বন্ধুমহল আমাদের সেরা জুটি বলতো।তাই দুইজনকেই সবাই রনিপু (রনি+নিপু) বলে ডাকতো। নিপু দেখতে আহামরি সুন্দর না।তবে তার গুণগুলি যে কোনো মানুষের মন হরণ করতে পারবে নির্বিঘ্নে। সেই সুবাদে , সে আমার মা-বাবার মেয়ের স্থান টাই দখল করে ফেলে। মাঝে মাঝে আমি হিংসা করে মাকে বলতাম ," বউ কে আপন করে ছেলেকে পর করা হচ্ছে কিন্তু"। নিপু মুখে ভেংচি কেটে বলতো, "যে মায়ের থেকে দূরে আছি । সে মাকে ত কাছে আনতে পারবো না। তাই চোখের সামনে যে মা আছে , সে মায়েরই মেয়ে হবো। তাতে তোমার সমস্যা থাকলে , চোখ বুজে থাকো।" কথা শুনে মা শুধু হাসতো ।
অন্য ভাইরা বাবা-মার থেকে আলাদা থাকতো। তবে আমি আর নিপু একসাথেই থাকতাম ।বাবার জমিতে ফসল মাড়াই করে আমাদের সংসার স্বাচ্ছন্দ্যেই কাটছিলো।
কিন্তু আমাদের এ সুখ বেশি দিন টিকলো না।আমাদের জমিগুলো ছিলো নদীর পাশেই। গতবছর নদী ভাঙ্গনে , আমাদের জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়ে যায়। জমিও নদীর গ্রাসে চলে যায়। আমাদের আর সম্বল বলতে কিছুই রইলো না। তাই বাধ্য হয়ে নিপুকে ওদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। আর আমি চলে আসি ঢাকাতে এক প্রতিবেশির সাথে।
কিছুদিন দিনমজুরের কাজ করি। এক বিকেলে কাজ শেষে, চা এর টং দোকানে বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাত্‍ করেই চোখ বাইরে চলে গেলো। এক ভদ্রলোকের ফোন বের করার সময় পকেট থেকে তার মানিব্যাগ টা পড়ে যেতে দেখলাম। কিন্তু লোকটি খেয়াল না করে চলে যেতে দেখে , দৌঁড়ে মানিব্যাগটা হাতে নিয়ে লোকটির হাতে দিলাম। বেশ খুশি হয়ে বললো , অনেক বড় উপকার নাকি করেছি আমি। কি করি জানতে চাইলো ? দিনমজুরের কথা শুনে আমাকে উনার বাসার দাড়োয়ানের জন্য প্রস্তাব দিলো। আমি কোনো কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম। সারাদিন বসে থাকা , বেতনও বেশি মজুরির থেকে।পোশাকও নাকি উনিই কিনে দিবেন।
পরেরদিন ঠিকানা দেখে উনার বাসাতে চলে যাই।থাকা-খাওয়া উনাদের মাঝেই। বেশ ভালো চলছিলো । বউকে মাসে মাসে টাকা পাঠাতে পারি। বউও এখন আমার বাড়িতে চলে এসেছে।
কিন্তু গিয়ে দেখে আসতে পারিনা। সাহেবরা বেশির ভাগই দেশের বাইরে থাকেন। তাই আমাকে বাসার দায়িত্ব দেন। সেজন্য আমার আর বাড়ি যাওয়া হয়ে উঠেনা। গেলেও তিনদিনের বেশি ছুটি পাই না। ইচ্ছে করে বউ এর পাশে বসে জানালা দিয়ে চাঁদ দেখে সারা রাত গল্প করতে। কিন্তু তা আর পারিনা। স্বপ্ন স্বপ্নই থাকে ।
তাই রাতে ঘুম না এলে খাতা খুলে , মনের কথা গুলো লিখে রাখি।গরীবদের এ লিখা জানি , কেউ পড়বে না ।কখনো কারো চোখেও পড়বেনা।
আজও ঘুম আসছেনা । ফোন করে মা বললো, বউ এর অবস্থা ভালোনা। বলায় হয়নি আমি বাবা হবো। কিন্তু সাহেবরা শীতের ছুটি কাটাতে সপরিবারে দেশের বাইরে চলে গেছে।
প্রথম বাবা হবো , তবুও বউ এর পাশে থাকতে পারছিনা। আমার বাচ্চার মুখ দেখতে পারছিনা। খুব খারাপ লাগলেও যেতে পারিনা ।কারন , আমি কারো বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে শিখিনি। আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবার সে শিক্ষা দেয়নি।মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তে নৈতিকতার যে শিক্ষা দেন । তা ইদানিং উচ্চবিত্ত পরিবার বিরল।
আজ নিজেকে খুবই অসহায় মনে হচ্ছে। মন খারাপ হলেও লিখার মত অবস্থা নেই। তাই রুম থেকে বাইরে এলাম ফোনটা হাতে নিয়ে।বাইরে চেয়ার রাখা আছে। সেখানে বসে পড়লাম। ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে। একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছি আরেক বার আকাশের দিকে। বাবার ফোনের অপেক্ষাতে আছি । আর ডানা ভেঙ্গে যাওয়া পাখির মত ছটফট করছি।
মনের মাঝে আঁকার চেষ্টা করছি , আমার অনাগত সন্তানের মুখ। কখনো ভেসে উঠছে, নিপুর শুকিয়ে যাওয়া অশ্রু মিশ্রিত মুখখানি।


-: সমাপ্ত :-

কেন এমন হয় জোনাকী আক্তার ************************** ভাঙা গড়ার খেলায় নিজেকে বারবার গড়ি, দু:খ-সুখের ভেলায় ঘুম ভাঙার মতই কেটে যায় সুখের রেশ...